Wap4dollar.com

Friday 8 June 2018

সম্পদ হেফাজত এর দোআ এবং দরকারি সব বিষয়




বাণী






খারাপ চরিত্রের মানুষ



কিছু দোআ





বাণী














পর্দা নামালে







আল্লাহুর ১৫ টি আজাব 












ব্যয় করা












বাসর  ঘরের দোআ








আল্লাহুর অপছন্দ








মনটাকে ভাল রাখা






ভাল গজল




সালাম





সঙ্গ






নামাজ










আল্লাহ 





দোআ কূনুত




Wednesday 6 June 2018

লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত শ্রেষ্ঠ রাত, ঐশ্বর্যময় রাত, কোরআনের রাত কেন? জানেন কি? - ইবাদাত এর শ্রেষ্ট রাত।


শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত কেন? জানেন কি?

‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাত্রিকে লাইলাতুল কদর হিসেবে নামকরণ করার কারণ হলো, এ রজনীর মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মদীর সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে বা এ রাতে মানবজাতির তাকদির পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই এই রজনী অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত।

আল্লাহ তাআলা যে মহিমাময় রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন, যে একটি মাত্র রজনীর ইবাদত-বন্দেগিতে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে,(কারন একদিনের বোধোদয়/জ্ঞান হাজার মাস অজ্ঞ বা নিরক্ষর থাকা হতে উত্তম)এই একটি রাতেই আপনার মন থেকে সব শংকা প্রশ্ন দুর হয়ে যেতে পারে যদি আপনি কোরআন বুঝে পড়েন , এবং এই রাতের জন্যই হয়তো আপনি আগামী দিনে সঠিক পথে চলবেন তাই এই এক রাতই হতে পারে আপনার জীবনে হাজারো না জানা, না মানা, না চেস্টা করা রাতের সমান
The Night of Majesty is better than a thousand months. [A day of enlightenment is better than a life-time of ignorance]
কদরের রাত কে কেন কোরআন বোঝার ও পড়ার রাত বলাহয় তার কারন সুরা কদর এর সাথে পুর্বের সুরার সম্পক যেমন:

১। সুরা আলাক শুরু হয়েছিলকিভাবেআল্লাহ কোরআন নাযিল শুরু করেন ,আর এই সুরা কদরকখনকোরআন নাযিল হয় সেটা নিয়ে আলোচনা করে।

২। সুরা আলাক শুরু হয় " اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
আর সুরা কদর শুরু হয়েছে "إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে। "
আরো দেখুন সুরা কদরের ২ নং আয়াতে বলা হয়েছে
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?
অথ যা বুঝাচ্ছে যে: আপনি জানতেন না কদরের রাত কি। আপনি শুধুমাত্র জানতে পেরেছেন কারন আল্লাহ আপনাকে এ বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন / বলেছেন।

৩। সুরা আলাকের শেষ আয়াত ১৯ নং :"كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনই নয়, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। আপনি সেজদা করুন ও আমার নৈকট্য অর্জন করুন।[ সেজদাহ্ ]"
সুরা কদরে বলা হয়েছে- সারাবছরের মধ্যে সবচেয়ে ভাল সময় হলো আল্লাহর কাছাকাছি যাবার - কদরের রাতে (যা রমজানের শেষ দশ রাত্রিতে)
আর কাছাকাছি যাবার মাধ্যম হল সেজদাহ্ তাই দেখুন সুরা আলাক শেষ হয়েছে সেজদাহ্ দিয়ে।

৪। সুরা আলাকে বলা হয়েছে ইকরা-পড়ুন(কোরআন)
আর সুরা কদরে বলা হয়েছে কোরআন নিয়ে মানে কোরআন পড়তে বলা হয়েছে।
এবার দেখি কদরের রাত কোনটি হতে পারে?
আমরা মোটামুটি শিওর যে এটা রোজার/রমজানের শেষ দশ রাতের মধ্যে যে কোন বেজোর একরাত (২১,২৩,২৫,২৭ অথবা ২৯ তম রাতে হতে পারে)
সুরা কদরের আয়াত সংখ্যা ৫ টি ঠিক যেমন রমজানের শেষের বেজোর রাতও ৫ টি।
ইবনে আব্বাসের একটি মতামত রয়েছে যে লাইলাতুল কদর ২৩তম রাত্রিতে (উনার ইজতিহাদ বা রিসার্চের উপর নির্ভর করে উনি বলেছিলেন)
পরবর্তীতে উনি মতামত দেন লাইলাতুল কদর ২৭তম রাত্রিতে।
সবচেয়ে বেশি আলোচিত মতামত বেশির ভাগ আলেম/বিদ্বানেরা ২৭ তম রাত্রিকেই লাইলাতুল কদর বলে মতামত দিয়েছেন।
এটা খুবই কৈতুহলপুর্ন/আকর্ষনীয় যে কিভাবে ইবনে আব্বাস হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রঃ)কে ব্যখ্যা করেন কেন তিনি ২৭তম রাত্রিকে কদরের রাত বলে মতামত দেন তিনি বলেন: লাইলাতুল কদর ৯টি অক্ষর নিয়ে গঠিত [লাম, ইয়া, লাম, তা,আলিফ, লাম, কাফ, দাল, রা=৯টি অক্ষর]
এবং তিনি আরো বলেন লাইলাতুল কদর সুরা কদরে তিন বার উল্লেখ করা হয়ছে তাই ৯ x৩ =২৭ তাই তিনি মতামত দেন যে লাইলাতুল কদর ২৭শে রমজান।
এই পদ্ধতিকে দলিল বা প্রমান হিসেবে নেয়া হয়নি তবে এটা খুবই ইন্টারেস্টিং যে কিভাবে তিনি তার মতামত দেয়ার পিছনে যুক্তি দাড় করিয়ে ছিলেন।
তিনি আরো বলেন এই সুরা কদরে ৩০ টি শব্দ আছে (ঠিক যেমন ৩০টি রোজা) কিন্তু ২৭ মত শব্দ হলো هِيَ হিয়া [যার অর্থ এটি] আয়াত নং ৫ এ।
তিনি তারপর বলেন হিয়াবা যার অর্থ এটি দ্বারা বোঝায় যে- এই শব্দটা ৩০টি শব্দের মধ্যে ২৭ তম, ঠিক যেমনি ২৭ তম রাত কদরের রাত ৩০টি রমজানের রাতের মধ্য হতে।
তাই দেখুন সাহাবারা কোরআনকে নিয়ে কত রকম ভাবে ও কত গভীরে চিন্তা করতেন।
সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হলো এটা শেষের যে কোন বেজোর রাতে আর আমরা ঠিক জানিনা কোন রাতটা আর আলেমরা মতামত দেন যে আপনি শেষের ১১ টি রাতকে গুরুত্ব সহকারে নিন কারন ভিন্ন মতামত ও কনফিউসনের জন্য যাতে আপনি শবে কদর মিস না করেন। তাই শেষের ১১ টি রাতকে গুরুত্ব সহকারে নিলে আপনি একদিন না একদিন কদরের রাত পাচ্ছেনই।
লাইলাতুল কদরের অপার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪) কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হয়।
আমরা যাতে আমাদের এনার্জি জমা রাখি প্রথম ২০ রোজায় কারন অনেক মুসলিম দেখবেন প্রথম দিকে খুব উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যেদিয়ে রোজা রাখে সকল নামাজ পড়ে এমনি ২০ রাকাত তারাবি নামাজও কিন্তু শেষ দশ দিন মানুষ কমতে থাকে যখন কি শেষ ১০ দিনেই আছে সেই মহিমান্বিত ঐশ্বর্যময় শবে কদর।
আমরা যেন নামাজ পড়ি শুধু মাত্র আল্লাহকে স্বরনের উদ্দেশ্যে কারন আল্লাহ বলেন (২০) সূরা ত্বোয়া-হা ( মক্কায় অবতীর্ণ ), আয়াত ১৪:
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।
তাই সবার কাছে অনুরোধ এই রমজান মাসে শুধু নয় যখনই পারবেন কোরআন পড়ার চেস্টা করবেন শুধু মাত্র বোকার মত তিলাওয়াত নয় অর্থ সহ জেনে বুঝে পড়ার চেস্টা করবেন কারন একদিনের বোধোদয়/ জ্ঞান হাজার মাস অজ্ঞ বা নিরক্ষর থাকা হতে উত্তম।

আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন




লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য |

পবিত্র ও মহামান্বিত রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদর । যাকে ফারসীতে বলা হয় শবে কদর। শবে বরাত, শবে মিরাজ ও শবে কদর এই তিন পূণ্যময় রাত্রির মধ্যে শবে কদরই একমাত্র রাত্রি যার আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করার জন্য একটি পৃথক সূরা নাযিল হয়েছে। ইসলামী বর্ষপঞ্জীতে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে।
এই মহিমাময় রজনীই প্রথমবারের মত প্রত্যক্ষ করেছিল সেই স্বর্গীয় দ্যূতি, সমগ্র বিশ্বকে দীপ্তিময় করে তোলার জন্যই যার সৃষ্টি হয়েছিল। এই মহান মর্যাদাময় রাত্রি লাইলাতুল কদরেই বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিসনদ, সর্বযুগের সর্বদেশের সর্বজাতির সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় বিধান গ্রন্থ আল-কুরআন  নাযিল করা হয়েছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে।
অবশ্য পবিত্র কুরআনের নাযিল বলতে প্রথম প্রত্যাদেশের কথাই ইংগিত করা হচ্ছে, কারণ পুরো কুরাআন শরীফ ২৩ বছরব্যাপী সময়কালের মধ্যে নাযিল করা হয়। পবিত্র কুরআনে এই শুভ রজনীর আধ্যাত্নিক মাহাত্ন্য বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে একটি সূরায় যার নাম সূরা কদর। মক্কায় অবতীর্ণ পাঁচ আয়াত বিশিষ্ট এই সূরা কোরআন মজিদের ৯৭তম সূরা। আল্লাহ্‌ তার অসীম করুণায় ইরশাদ করেছেন,  আমি এই (মহাগ্রন্থ)টিকে নাযিল করেছি (একটি) মর্যাদাপূর্ণ রাতে। তুমি কি জান সেই (মর্যাদাপূর্ণ) রাতটি কি? এই মর্যাদাপূর্ণ রাতটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতের মধ্যে ফেরেশতা ও তাদের সর্দার  রূহ তাদের মালিকের সব ধরনের আদেশ (ও বাণী) নিয়ে (যমীনে) অবতরণ করেন। অনাবিল প্রশান্তি (এখানে নেমে আসে এবং তা পরবর্তী দিনের) সুবহে সাদেক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
এই সূরা কদরের শানে নুযুল তথা নাযিল হবার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায় যে, প্রিয় নবী [সাঃ] একদিন সাহাবায়ে কেরামের নিকট বনী ইসরাইলের এমন  এক মুজহিদ সম্পর্কে বলছিলেন , যিনি এক হাজার মাসব্যাপী দিবসে লাগাতার সিয়াম ও জিহাদে কাটাতেন এবং রাতে লাগাতার ইবাদত-বন্দেগী করতেন। বনী ইসরাইলের ঐ ব্যক্তির কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম আফসোস করতে করতে বলেন, আমাদের দীর্ঘকাল ইবাদত বন্দেগী করার সুযোগ নেই । কারণ আমাদের আয়ু অত্যন্ত সীমিত। এই সময় সূরা কদর নাযিল হয়, যাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় কদরের এই একটি রাত হাজার মাসের অপেক্ষা উত্তম অর্থাৎ এই একটি রাত ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে পারলে হাজার মাস লাগাতার ইবাদত-বন্দেগী করলে যে সাওয়াব পাওয়া যেত তার চেয়ে অধিক সাওয়াব পাওয়া যাবে।
লাইলাতুল কদর এত মর্যাদাপূর্ণ মহিমান্বিত হওয়ার কারণ হচ্ছে ৬১০ সালের এই রাতে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ [সাঃ] এর নিকট কোরআন নাযিলের সূচনা হয়। গোটা কোরআন মজীদ লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত ছিল। ঊর্ধ্ব জগতে এই লাওহে মাহফুজ রয়েছে। লাওহে মাহফুজ হতে গোটা কোরআন মজীদ লাইলাতুল কদরে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়। সেখান থেকে আল্লাহ্‌র বাণী বাহক ফেরেশতা জিব্রাঈল [আঃ] আল্লাহ্‌র নির্দেশে ৬১০ সালের রমযান মাসের শেষ দশকের কোন এক  বেজোড় রাতে মক্কার হেরা পাহাড়ের নিভৃত গুহায় বিশেষ অনুধ্যান হালতে অবস্থানরত হযরত মুহাম্মদ [সাঃ] এর নিকট আসেন। তখন তাঁর বয়স চল্লিশ বছর কয়েক মাস। ঐ দিন গভীর রাতে তাঁর নিকট ঐ নূরানী চেহারার ফেরেশতা  আবির্ভূত হন। ফেরেশতা তাঁকে  বললেন ঃ পড়ুন! তিনি বললেন ঃ আমি তো পড়তে পারি না । তখন ফেরেশতা  তাঁর বক্ষ মুবারককে নিজের বক্ষের সঙ্গে মিলিয়ে জোরে চাপ দিলেন। এমনিভাবে তিনবার কথোপকথন ও কোলাকুলি করার পর জ্ঞান রাজ্যের সকল দুয়ার তাঁর সম্মুখে উন্মোচিত হয়ে গেল। তিনি অবাধে পাঠ করলেন সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াতে কারীমা ।

এই পাঁচ আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে,

১. (হে মোহাম্মদ) তুমি পড়ো, তোমার মালিকের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।
২. (যিনি) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা (একদলা) রক্ত থেকে।
৩. তুমি পড়ো. এবং (জেনে রেখো) তোমার মালিক বড়ই মেহেরবান ।
৪. তিনি কলমের সাহায্যে (যাবতীয়) জ্ঞান বিজ্ঞান শিখিয়েছেন।
৫. মানুষকে এমন সব বিষয় শিখিয়েছেন, যা তিনি না শিখালে সে জানতেই পারতো না।

প্রিয় নবী [সাঃ] এর নিকট কোরআন নাযিলের এই মুহূর্তটি অত্যন্ত ভারী বোঝা বহনের ন্যায় কষ্টের ছিল। তিনি ভয়ে বিস্ময়ে নিশ্চল হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলেন। ফেরেশতা চলে গেলে তিনি কাঁপতে কাঁপতে গৃহে ফিরে এসে তাঁর সহধর্মিনী হযরত খাদিজা [রাঃ]কে বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। হযরত খাদিজা [রাঃ] স্বামীকে কম্বল দ্বারা ঢেকে দিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি এ অবস্থা কিভাবে হলো তা জানতে চাইলে প্রিয়নবী [সাঃ] হেরা গুহায় যা ঘটেছে সব একে একে খুলে বলেন। তারপর তিনি বললেন ঃ আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে, এই কঠিন বোঝা আমার কাছে অসহ্য, আমার ভয় হচ্ছে আমি হয়তো হালাক হয়ে যাবো। স্বামীর এ কথা গুলো শুনে হযরত খাদিজা [রাঃ] বললেনঃ আপনার ভয় পাবার কোন কারণ নেই। আল্লাহ তায়ালা আপনার প্রতি অপার করুণা ও অসীম রহমত প্রর্দশন করেছেন। আপনি দুর্বলের প্রতি দয়া করেন, আত্মীয় -পরিজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করেন, মেহমানদিগকে খেদমত ও পরিচর্যা করেন,অভাবগ্রস্তদের অভাব বিমোচনের জন্য সাহায্য সহযোগিতা করেন। যিনি আল্লাহর মাখলুক মানুষের প্রতি এত হৃদয়বান, তিনি আল্লাহর রহমত প্রাপ্তই হয়ে থাকেন। তিনি কোন অবস্থাতেই আল্লাহর গজবের পাত্র হতে পারেন না। হযরত খাদীজা [রাঃ] প্রিয়নবী [সাঃ]কে নিয়ে বহু শাস্ত্রের পন্ডিত ওরাকা ইবনে নওফেলের কাছে গেলেন। ওরাকা ইবনে নওফেল সব ঘটনা শুনে অতি আনন্দের সঙ্গে বললেন ঃ ইনিই আল্লার বাণী বাহক ফেরেশতা হযরত জিব্রাঈল [আঃ]। ইনিই আল্লাহর নিকট হতে ওহী নিয়ে আসেন। ইনি হযরত মুসা [আঃ] এর নিকটও আবির্ভূত হতেন। তুমি আনন্দিত হও ভয় পেয়ো না। তবে তোমার কওসম আল্লাহর এই অনুগ্রহের কদর বুঝবে না। তারা তোমাকে যন্ত্রণা দিবে। তারা এই নগরীতে তোমাকে থাকতে দিবে না। আমি যদি সেই সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতাম তাহলে তোমাকে সাহায্য করে দু’জাহানের অধিকারী হতে পারতাম। এখানে উল্লেখ্য যে, এর কয়েকদিন পর অতি বৃদ্ধ ওরাকা ইবনে নওফেল ইন্তেকাল করেন।
শবে কদরের এই রাতে প্রত্যেক বিজ্ঞানময় কাজ , যুক্তি ভিত্তিক কথা ও জ্ঞানপূর্ণ বার্তা পৃথক পৃথকভাবে বিবৃত হয় । সকল কিছুর যথাযথ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দ্বারা ঐ রাতেই উন্মোচিত হল। মানুষের প্রকৃত মূল্যায়নের সোনালী অধ্যায়ের সুচনা হল  এবং অবিচার-অত্যাচারে ভরা বিশ্বে সুবিচার প্রতিষ্ঠার সুত্রপাত হল। প্রত্যেক ব্যক্তি তার বাঞ্ছিত সর্বাধিক মর্যাদা পেল এই প্রথম। সারা বিশ্বের ইতিহাসে যা কোন দিন কোন জাতির, কোন গোত্রের কোন মানুষ পায়নি,সমাজের বুকে প্রত্যেকে তার যথাযথ মর্যাদা পেল, পেল অনবদ্য মানসিক শানিত্ম। সুরা বাকারাতে স্পষ্ট উলেস্নখ রয়েছে ঃ রমযান মাসেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়, মানব জাতির পথ প্রদর্শক হিসেবে, ভালো-মন্দের মধ্যে দিকচিহ্ন আর বিচার মানদণ্ড হিসেবে। তবুও কেউই এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে বলতে পারে না রমযান মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনটিতে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন  পৃথিবীতে ফেরেশতার মাধ্যমে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার ঐশীবাণী কোরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছিল।

হযরত আয়েশা [রাঃ] হতে বর্ণিত। হুজুর [সাঃ]  বলেছেন,তোমরা শবে কদরকে  রমযানের শেষ দশ দিনের, বেজোড়  রাতে তালাশ কর।

ইবনে আব্বাস [রাঃ] হতে বর্ণিত । হুজুর [সাঃ] বলেছেন, তাহা (শবে কদর) শেষ দশ দিনে আছে যখন রাত্র অতীত হয়ে যায় কিংবা সাত রাত্র বাকী থাকে (অর্থাৎ ২৯ কিংবা ২৭ তারিখে ) কেউ কেউ আক্ষরিকভাবে রমযান মাসের নির্দিষ্ট কোন রাত্রির প্রতি ইংগিত করেন ঠিকই, কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও কোন নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রমযান মাসের ২১, ২৩ এবং আরো সম্ভাবিত ২৫, ২৭ ও ২৯শের মধ্যেই মানব জাতির ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনা ঘটেছিল বলে অনুমান করা হয়। এ সম্পর্কে ইবনে হাম্বলের অভিমতে ইবনে ওমরের বর্ণিত একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রিয় নবী [সাঃ] বলেছেন, কেউ যদি এ রাতের দিশা পেতে চায় তবে সে যেন ২৭শে তা খোঁজ করে। অবশ্য বর্ষপঞ্জীর পুংখানুপুংখ বিচার বিশ্লেষণ করে এ রাতের হদিস নেবার সম্ভবতঃ তেমন কোন প্রয়োজন নেই। অসীম মহান ও সৌভাগ্যের অধিকারী সেই রাত্রি, যে রাত্রিতে আল্লাহ্‌ তায়ালার পরিশুদ্ধতম বাণী প্রথমবারের মত পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয় রৌদ্রদগ্ধ, শুষ্ক ভূমিতে নেমে আশা বৃষ্টির করুণাধারার মত। এ জন্যই ‌’ইতেকাফ’ বা নিবেদিতচিত্তে ঐশী চিন্তার ও ধ্যানের জন্য রমযান মাসের শেষ দশ দিন নির্ধারিত ।

আমাদের প্রিয় নবী [সাঃ] রমযান মাসের শেষ দশ দিন মসজিদের নির্জনতায় ধ্যানে  ও ইবাদতে তাঁর সময় অতিবাহিত করেছেন। এমনকি ইতেকাফের সময় তিনি তার খাটিয়াটি মসজিদ প্রাঙ্গনে একটি স্তম্ভের আড়ালে রেখে দিতেন। হাজার মাস চ কথাটিকে ব্যাপকতর অর্থে বিস্তৃত কাল প্রবাহ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এটি আধ্যাত্মিকভাবে সময় সম্পর্কে সাধারণ মানবিক ধারণা না হয়ে এক অনন্তকাল প্রবাহকেই ইংগিত করতে পারে । মাওলানা ইউসূফ আলীর ভাষায়, ঐশী চেতনায় উদ্দীপিত একটি মুহূর্ত সহস্রমাস বা বছরব্যাপী জৈবিক সময় অপেক্ষা মহত্ত্বর এবং এমনি একটি মাত্র পবিত্র মুহূর্ত রাত্রির অন্ধকারকে নিমিষে পরিবর্তিত করে আধ্যাত্মিক মোহনীয়তায়। তেমনি আল্লাহ্‌র নির্দেশে ফেরেশতা এবং আত্মার শুভাবতরণ লাইলাতুল কদরের গভীরতর বৈশিষ্ট্যের প্রতিই নির্দেশ করে। কেননা যদিও রমযান মাসের যে কোন রাত্রি বিশেষ তাৎপর্যে অভিষিক্ত হতে পারে, তবুও মানব সমাজের উত্তরণের জন্য পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের কাছে আল্লাহ্‌ তায়ালার মহান তাৎপর্য এখানেই ।

সূরা কদরের সমাপ্তি হয়েছে এক চমৎকার উক্তি দিয়ে শান্তি থাকুক প্রভাতের পুনরাগমন পর্যন্ত। শান্তিই হচ্ছে লাইলাতুল কদরের মুখ্য বৈশিষ্ট্য । ধ্যানীর চিত্তে এই শক্তি আসে স্থির প্রশান্ততায় যা তাকে দুর্লভ ঐশ্বরিক আশীর্বাদ গ্রহণ করার জন্য মানবিক ভাবে প্রস্তুত করে , আত্মার অন্ধকার যখন দূরীভূত হয় প্রসন্ন নিবেদনের   স্নিগ্ধতায় তখন চিত্তে জাগে এক অভূতপূর্ব শান্তি আর নিরাপত্তাবোধ । মাওলানা ইউসূফ আলীর কথায় -এ বোধ স্থায়ী “জীবনান্ত পর্যন্ত। আধ্যাত্মিক জগতের এক নতুন দিগন্ত উদ্ভাসিত হবে, সমস্ত কিছুই ভক্তচক্রে তখন প্রতিভাত হবে নতুন অর্থের ব্যঞ্জনায়, পৃথিবীর ছককাটা গতানুগতিক দিন আর রাত্রির পরস্পরকে মনে হবে একটি স্বপ্নের চেয়েও অকিঞ্চিৎকর। লাইলাতুল কদর সত্যিই খোদা তায়ালার রহমতে পরিপূর্ণ । এই মহান রাতের আধ্যাত্মিকক গুরুত্ব এতই বেশী যে, স্বয়ং মহানবী [সাঃ] ঘোষণা  করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় কদরের রাত্রে (ইবাদতে) দাঁড়াল , তাহার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া  হবে । অত্যন্ত গৌরবময় এবং দুর্লভ এই সুযোগ কেউ হারাতে চায়না বলেই সমস্ত বিশ্বের মুসলমানেরা এই শুভ রাতের জন্য আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করে এবং অত্যধিক বিশ্বস্ততা এবং ধ্যানের মাধ্যমে রাত্রিটি অতিবাহিত করার প্রতিক্ষিত সুযোগ এনে দেয়। এই পবিত্র রাত্রিতে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা উচিত একমাত্র পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ তায়ালার ক্ষমার জন্য। কারণ কোন কিছুই পরম সদয়  এবং অনুগ্রহশীল আল্লাহ্‌ তায়ালার ক্ষমার চাইতে আনন্দময়, লাভজনক এবং মধুর হতে পারে না। হযরত আয়েশা [রাঃ] বলেছেন, মহানবী [সাঃ] কে জিজ্ঞাসা করল, এটিই সেই রাত্রি অনুমান করতে পারলে কি প্রার্থনা করবো? প্রিয় নবী[সাঃ] উত্তরে বলেছিলেন , বলবে হে প্রভু! তুমি ক্ষমা ভালবাস ।