Wap4dollar.com

Saturday 23 May 2015

★মুক্তির রাত পবিত্র শবে বরাত★

★মুক্তির রাত পবিত্র শবে বরাত★

দিন-রাত-মাস-বছর সবই আল্লাহর। তারপরও কিছু কিছু দিন ও রাতের মর্যাদার মধ্যে তারতম্য আছে। সে সকল দিন বা রাত অশেষ মহিমান্বিত, সওয়াব ও বরকতের অমিয় ধারায় প্লাবিত। শবে বরাত এমনি এক মহিমান্বিত ও বরকত, সওয়াবপূর্ণ রজনী। এ সময় ইবাদত-বন্দেগীর সওয়াব অনেক বেশি। শব ফারসি শব্দ-এর অর্থ রজনী বা রাত। আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য বা সৌভাগ্য, শব্দটির অন্য অর্থও আছে। শবে বরাতকে আরবীতে বলে লাইলাতুল বারায়াত। লাইলা অর্থ রাত বা রজনী, আর বারায়াত অর্থ মুক্তি, নিষ্কৃতি অর্থ লাইলাতুল বারায়াত মানে মুক্তি রজনী বা নিষ্কৃতি রজনী। শবে বরাত আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনার রাত। পরম করুণাময়ের দরবারে নিজের সারা জীবনের দোষ-ত্রুটি, পাপ কাজ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার রাত। এ রাতে পবিত্র মনে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করলে আল্লাহর কাছে নিজের পাপ-গোনাহ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন এবং অনুতপ্ত বান্দাহকে গোনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে তাকে মাফ করে দেন। এ কারণেই এ রাত মুক্তি রজনী বা নিষ্কৃতি রজনী তবে আমাদের দেশে বারায়াত শব্দটি বরাত অর্থাৎ ভাগ্য রজনী বা সৌভাগ্য অর্থেই বেশি প্রচলিত। এ কারণে এ দেশে শবে বরাত সাধারণ অর্থে ভাগ্য রজনী বা সৌভাগ্য রজনী হিসেবেই বেশি পরিচিত। আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৫ শাবান পবিত্র শবে বরাত বা সৌভাগ্য রজনী। রাসূল (সাঃ) বলেছেন- যখন শাবান চাঁদের ১৫-এর রাত আসবে তখন তোমরা জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে। আর পরদিন রোজা রাখবে । কেননা আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের পরই সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং তার বান্দাদের ডেকে বলেন, ওহে আছো কোন ক্ষমা প্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করব। আছো কোন রিজিক প্রার্থী? আমি তোমাকে রিজিক দেব। আছো কোন বিপদগ্রস্ত? আমি তোমাকে বিপদমুক্ত করব। আছো কোন তওবাকারী? আমি তোমার তওবা কবুল করব। এভাবে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ আহবান করতে থাকেন (ইবনে মাজাহ)। অন্য এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন- শবে বরাতে আল্লাহ স্বীয় রহমতের তিনশত দ্বার খুলে দিয়ে প্রথম আসমানে আসেন এবং সূর্যাস্ত হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত তাঁর বান্দাহদেরকে এ বলে আহবান করতে থাকেন, হে আমার বান্দাহগণ আজ তোমরা কে কি চাও? কে রোগ মুক্তি চাও? কে মনোবাসনা পূর্ণ করতে চাও? কে সারা জীবনের গুনাহর ক্ষমা চাও? কে অফুরন্ত সুখের জান্নাত চাও? আজ যে-যা চাও তা পাবে। পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত ও মাহাত্ম বর্ণনায় আরো অনেক হাদীস আছে যা স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব হলো না। শবে-বরাতের রাতে আল্লাহর বিশেষ রহমত অনিঃশেষ ধারায় বর্ষিত হতে থাকে তার বান্দাহদের ওপর। এ রাতে মানুষের ভালোমন্দ কাজ-কর্ম হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। সারা বছরের যাবতীয় ফয়সালা হায়াত, মওত, রিজিক, দৌলত, আমল ইত্যাদির সহিত সম্পর্কযুক্ত আদেশ-নিষেধসমূহ উক্ত রাত্রিতে লওহে মাহফুজ হতে উদ্ধৃত করে কার্যনির্বাহক ফেরেশতাদের নিকট সোপর্দ করা হয়। প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নির্দেশনাযায়ী এ পবিত্র রাতে সাধারণত ইবাদত-বন্দেগীর মাঝে নিমগ্ন থাকাই প্রতিটি মুসলমানের প্রধানতম কাজ।

অন্তরকে কলুষমুক্ত করে ভক্তি ও আশা-ইয়াকিনসহকারে নফল নামাজ, তিলাওয়াত-ই-কুরআন, দরূদপাঠ, দান-খয়রাত, দু’আ-মুনাজাত প্রভৃতি ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখতে হবে। শবে বরাতের নামাজের নির্ধারিত কোন নিয়ম নেই। দু’রাকাত হতে ২০ রাকাত পর্যন্ত নফল নিয়তে নামাজ পড়তে হয়। এ পবিত্র রাতের ইবাদত-বন্দেগীর মর্যাদা সম্পর্কে পরিবারের সদস্যগণকেও উৎসাহ ও গুরুত্ব অনুধাবন করাতে হবে। শেষ রাতের দিকে পরিবারের সবাইকে আল্লাহর রহমত ও বরকতের অংশীদার হওয়ার জন্য জাগায়ে ইবাদত ও দু’আ-মুনাজাতে মশগুল করায়ে দিতে হবে যেন ছোট-বড় সকলেই রহমতের অংশ নিয়ে সৌভাগ্যবান হতে পারে। করণীয় আমলের সাথে কতগুলো বর্জনীয় বিষয়ও জড়িত থাকে। সে বিষয় বর্জন না করলে শবে বরাতের বরকত হতে মাহরূম হতে হয়। সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতা, রহমতের পরিবর্তে গযব, সওয়াবের পরিবর্তে আযাবই নসীব হয়। তাই এ রাতে অপব্যয় ও অপচয় না করে অযথা আতশবাজীতে অনর্থক অর্থ অপচয় না করে সে অর্থ কল্যাণকর কাজে বা ফকির-মিসকিনের মাঝে দান করে দেয়া অনেক সওয়াব ও বরকতের কাজ। প্রকৃতপক্ষে শবে বরাতের বৈশিষ্ট্য অনুষ্ঠানের আড়ম্বরতার মধ্যে নয়, বরং চরিত্রবলের সাধনার মাধ্যমে করুণাময়ের করুণা লাভের প্রয়াসই এর তাৎপর্য। সর্বস্ব সম্পূর্ণ করে নিঃশেষে আত্মনিবেদনের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে ডাকাই এ পবিত্র রাতের প্রধান কাজ।

শবে বরাত মূলতঃ আল্লাহর ইবাদতের রাত, তাঁর রহমত ও পরম সৌভাগ্য তাঁর নিকট থেকে চেয়ে নেয়ার রাত। তাই এ রাতে এক মনে আল্লাহর ইবাদত করাই আমাদের একমাত্র কর্তব্য। কেননা এ রাতে নিজের গোনাহ বা পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হলে তিনি তা কবুল করেন। এ পবিত্র রাতে তাঁর রহমত অজস্রধারায় তাঁর বান্দাহদের ওপর বর্ষিত হতে থাকে। আসুন এ রাতে আমরা মুনাজাত করি, হে আল্লাহ আমাদের বরাত খুলে দাও এ পবিত্র রাতে, আমরা তোমার সাহায্য প্রার্থনা করছি, তুমি আমাদের সকল গুনাই মাফ করে দাও।

★★শবে বরাতের পরিচয়:
আরবি শাবান মাসের চৌদ্দই দিবাগত পঁনের তারিখের রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। এই রাতে একটি বছরের জন্য সৃষ্টি জগতের অদৃষ্ট বন্টন করা হয়। এই জন্য এই রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই কারণেই সাবান মাসের ফজিলত অনেক বেশি।

তাৎপর্য:
এই রাত্রি সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেন, এই রাত্রিতে এবাদত-কারিদের গুনাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সাথে শিরককারী, সুদখোর,গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে হুজুর (সা:) বলেছেন, “জিব্রাইল (আ:) আমাকে বলেছেন, আপনি আপনার উম্মতদের জানাইয়া দেন যে, তারা যেন শবে বরাতের রাতকে জিবীত রাখে।” অর্থাত্, সারারাত তারা যেন ইবাদতের মাঝে কাটাইয়া দেয়।

আরেকটি হাদীসে রাসূল (সা:) বলেছেন,এই রাত্রে আসমান থেকে ৭০ লক্ষ ফেরেশতা যমীনে আসিয়া ঘুরিয়া ফিরিয়া এবাদতকারী-দিগকে পরিদর্শন করেন এবং তাদের এবাতদ সমূহ দেখতে থাকেন।

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যাক্তি সাবান চাঁদের পঁনের তারিখে রাতে এবাদত করবে এবং দিনে রোজা রাখবে, দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।

আরো এক হাদিসে রাসূল (সা:) বলেছেন, তোমরা শবে বরাতকে সম্মানিত মনে কর। এটা শাবান চাঁদের পঁনের তারিখের রাত্রি। এই রাত্রে যারা এবাদতে মগ্ন থাকে তাদের প্রতি আল্লাহ পাকের রহমতের ফেরেশাতাগণ আবতীর্ণ হয়। আর আল্লাহ তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।

এক হাদীসে এসেছে নবী কারীম (সা:) বলেছেন, এই রাতে আল্লাহ তা’আলা মোমিন মুসলমাদিগকে ডাকিয়া বলেন, আজ আমার যে বান্দা মার্জনা কামনা করবে, আমি তাকে মার্জনা করে দেব। যে বান্দা সাস্থ্য কামনা করবে, তাকে সাস্থ্য দান করব। যে বান্দা ধনৈশ্ব্-র্যের কামনা করবে, তাকে ঐশ্বর্যশালী করে দিব।

এ রাতে করনীয়ঃ
এ পুরো রজনী হল ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এক উত্তম রাত্রী, যার ফজীলত হাজার রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে বান্ধা তার সকল পাপ কাজের ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহর আরশ উন্মুক্ত পাবে আর মহান আল্লাহ ও নিজেই ঘোষনা করে দিয়েছেন যে তিনি চাইতে থাকেন খুজতে থাকেন কে তাহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা চাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত এই রাতে বেশী বেশী ইবাদত করা, নফল নামাজ পড়া, জিকির করা, কুরআন পাঠ করা। এই দিনে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ পাকের নূর সর্বনিম্ন আকাশে অবতীর্ণ হয় এবং বলা হয়- কে আছ গুনাহ মাফ করাতে চাও? কে আছ তার মনের আকাংখা পূরণ করাতে চাও? কে আছ তার রুজী বৃদ্ধি করাতে চাও? কে আছ তার রোগ, শোক, দুঃখ কষ্ট দূর করাতে চাও? এরূপ ঘোষণার সময় যদি কোন বান্দা হাত তুলে মুনাজাত করে, তবে আল্লাহ আয যাওযাল তার মুনাজাত কবুল করে নেন।

★★★শবে বরাতের নামায এবং নিয়ম কানুনঃ
প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের নামাজ বলে আলাদা কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগী করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন। হাদিসের আলোকে আমী সেগুলোর কথাই নিন্মে উল্লেখ করছিঃ

সন্ধ্যায়ঃ
এই রাতে মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাযত এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দু রকাত করে মোট ৬ রকাত নফল নামায পড়া উত্তম।

এই ৬ রাকাত নফল নামাযের নিয়মঃ
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে। দু রকাত নামায শেষে করে সূরা ইয়াছিন বা সূরা ইফলাছ শরীফ ২১ বার তিলায়াত করতে হবে।

শব-ই বরাত এর নফল নামাযঃ

১।দুই রাকাত তহিয়াতুল অযুর নামায।

নিয়মঃ প্রতি রকাতে আল হামদুলিল্লাহ ( সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ শরীফ ( সূরা এখলাছ) । ফযীলতঃ প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে।

২।দুই রাকাত নফল নামায।

নিয়মঃ ১নং নামাযের মত, প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ শরীফ, অতপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফযীলতঃ রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখসিস পাওয়া যাবে।

৩। ৮ রাকাত নফল নামায , দু রকাত করে পড়তে হবে।

নিয়মঃ
প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর , সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফযীলতঃ গুনাহ থেকে পাক হবে , দু’আ কবুল হবে এবং বেশী বেশী নেকী পাওয়া যাবে।

৪। ১২ রাকাত নফল নামায , দু রকাত করে।

নিয়মঃ
প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামায শেষ করে , ১০ বার কলমা তওহীদ, ১০ বার কলমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ।

৫। ১৪ রাকাত নফল নামায, দু রকাত করে।

নিয়মঃ
প্রতি রকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন। ফযীলতঃ যে কোন দু’আ চাইলে তা কবুল হবে।

৬।চার ( ৪) রাকাত নফল নামায, ১ সালামে পড়তে হবে।

নিয়মঃ
প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফযীলতঃ গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভুমিষ্ঠ হয়েছে।

৭। ৮ রাকাত নফল নামায, ১ সালামে।

নিয়মঃ
প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ শরীফ।

ফযীলতঃ এর ফজিলতে সর্ম্পকে বর্ণিত আছে যে, হযরতে সৈয়্যদাতুনা ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহুমা এরশাদ করেছেন, “ আমি ঐ নামাজ আদায় কারীর সাফা’য়াত করা ব্যাতিত জান্নাতে কদম রাখবো না। রোযার ফযীলত হুজুর সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে শাবানে ১ দিন রোযা রেখেছে, তাকে আমার সাফা’য়াত হবে। আরো একটি হাদীস শরীফে আছে যে, হুজুর সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি শাবানের ১৫ তারিখে রোযা রাখবে, তাকে জাহান্নামের আগুন ছোঁবে না।

এ রাতে বর্জনীয়
১ হালুয়া রুটির মত আনন্দ উল্লাসের আয়োজন। আল্লাহর কাছ থেকে মাফ পেতে হলে তার ইবাদত করতে হবে, খাওয়া দাওয়ার মধ্য দিয়ে ফুর্তি করার মাধ্যমে নয়
২ আতশবাজি করা, রং ছিটানো।
৩ সম্মিলিত কোন আমলকে এই রাতে আবশ্যকীয় মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করে দাও, যেন তা পালন করতে পারি, আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপিত করে দাও, যেন এ থেকে বিরত থাকতে পারি।
★★★
শবে বরাত এবং আমাদের করনীয়
আজ পবিত্র শবেবরাত। শাবান মাসের ১৫ তারিখ কেই শবে বরাতের রাত্রী বলে ঘোষনা করা হয়। শব শব্দটি ফার্সি যার অর্থ রাত আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য। বিশেষ এ রাতে মহান আল্লাহতায়ালা আগামী এক বছরের জন্য মানুষের রিজিক, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণসহ তার সৃষ্ট জীবের ওপর অসীম রহমত নাজিল করে থাকেন বলে এ রাতকে শবেবরাত বা ভাগ্যরজনী বলা হয়।

এই রাত্রি সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেন, এই রাত্রিতে এবাদত-কারিদের গুনাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সাথে শিরককারী, সুদখোর,গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না।

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যাক্তি সাবান চাঁদের পঁনের তারিখে রাতে এবাদত করবে এবং দিনে রোজা রাখবে, দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।

এক হাদীসে এসেছে নবী কারীম (সা:) বলেছেন, এই রাতে আল্লাহ তা’আলা মোমিন মুসলমাদিগকে ডাকিয়া বলেন, আজ আমার যে বান্দা মার্জনা কামনা করবে, আমি তাকে মার্জনা করে দেব। যে বান্দা সাস্থ্য কামনা করবে, তাকে সাস্থ্য দান করব। যে বান্দা ধনৈশ্ব্-র্যের কামনা করবে, তাকে ঐশ্বর্যশালী করে দিব।

সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরক্ষণ থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নূরের তাজাল্লি পৃথিবীর কাছাকাছি আসমানে প্রকাশ পায়। তখন আল্লাহপাক বলতে থাকেন—আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী? যাকে আমি ক্ষমা করব, আছে কি কেউ রিজিকপ্রার্থী? যাকে আমি রিজিক প্রদান করব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? যাকে আমি বিপদমুক্ত করব। আল্লাহপাকের মহান দরবার থেকে প্রদত্ত এ আহ্বান অব্যাহত থাকে ফজর পর্যন্ত। বস্তুত শবেবরাত হলো আল্লাহপাকের মহান দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ সময়। আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয় এ শবেবরাত। অতএব, প্রতিটি কল্যাণকামী মানুষের প্রধানতম কর্তব্য হলো এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা।

এ রাতে করনীয়ঃ

এ পুরো রজনী হল ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এক উত্তম রাত্রী, যার ফজীলত হাজার রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে বান্ধা তার সকল পাপ কাজের ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহর আরশ উন্মুক্ত পাবে আর মহান আল্লাহ ও নিজেই ঘোষনা করে দিয়েছেন যে তিনি চাইতে থাকেন খুজতে থাকেন কে তাহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা চাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত এই রাতে বেশী বেশী ইবাদত করা, নফল নামাজ পড়া, জিকির করা, কুরআন পাঠ করা। এই দিনে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ পাকের নূর সর্বনিম্ন আকাশে অবতীর্ণ হয় এবং বলা হয়- কে আছ গুনাহ মাফ করাতে চাও? কে আছ তার মনের আকাংখা পূরণ করাতে চাও? কে আছ তার রুজী বৃদ্ধি করাতে চাও? কে আছ তার রোগ, শোক, দুঃখ কষ্ট দূর করাতে চাও? এরূপ ঘোষণার সময় যদি কোন বান্দা হাত তুলে মুনাজাত করে, তবে আল্লাহ আয যাওযাল তার মুনাজাত কবুল করে নেন।

শবে বরাতের নামায এবং নিয়ম কানুনঃ

প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের নামাজ বলে আলাদা কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগী করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন। হাদিসের আলোকে আমী সেগুলোর কথাই নিন্মে উল্লেখ করছিঃ

সন্ধ্যায়ঃ

এই রাতে মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাযত এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দু রকাত করে মোট ৬ রকাত নফল নামায পড়া উত্তম।

এই ৬ রাকাত নফল নামাযের নিয়মঃ

প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে। দু রকাত নামায শেষে করে সূরা ইয়াছিন বা সূরা ইফলাছ শরীফ ২১ বার তিলায়াত করতে হবে।

শব-ই বরাত এর নফল নামাযঃ

১। দুই রকাত তহিয়াতুল অযুর নামায।

নিয়মঃ প্রতি রকাতে আল হামদুলিল্লাহ ( সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ শরীফ ( সূরা এখলাছ) । ফযীলতঃ প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে।

২। দুই রকাত নফল নামায।

নিয়মঃ ১নং নামাযের মত, প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ শরীফ, অতপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফযীলতঃ রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখসিস পাওয়া যাবে।

৩। ৮ রকাত নফল নামায , দু রকাত করে পড়তে হবে।

নিয়মঃপ্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর , সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফযীলতঃ গুনাহ থেকে পাক হবে , দু’আ কবুল হবে এবং বেশী বেশী নেকী পাওয়া যাবে।

৪। ১২ রকাত নফল নামায , দু রকাত করে।

নিয়মঃ প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামায শেষ করে , ১০ বার কলমা তওহীদ, ১০ বার কলমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ।

৫। ১৪ রকাত নফল নামায, দু রকাত করে।

নিয়মঃপ্রতি রকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন। ফযীলতঃ যে কোন দু’আ চাইলে তা কবুল হবে।

৬। চার রকাত নফল নামায, ১ সালামে পড়তে হবে।

নিয়মঃ প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফযীলতঃ গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভুমিষ্ঠ হয়েছে।

৭। ৮ রকাত নফল নামায, ১ সালামে।

নিয়মঃ প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ শরীফ।

ফযীলতঃ
এর ফজিলতে সর্ম্পকে বর্ণিত আছে যে, হযরতে সৈয়্যদাতুনা ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহুমা এরশাদ করেছেন, “ আমি ঐ নামাজ আদায় কারীর সাফা’য়াত করা ব্যাতিত জান্নাতে কদম রাখবো না। রোযার ফযীলত হুজুর সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে শাবানে ১ দিন রোযা রেখেছে, তাকে আমার সাফা’য়াত হবে। আরো একটি হাদীস শরীফে আছে যে, হুজুর সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি শাবানের ১৫ তারিখে রোযা রাখবে, তাকে জাহান্নামের আগুন ছোঁবে না।

এছাড়াও পড়তে পারেন ‘সালাতুল তাসবীহ এর নামাজ। এই নামাজের অনেক অনেক ফযীলত রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুকে এই নামায শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এই নামায পড়লে আল্লাহ আয-যাওযাল আপনার আউয়াল আখেরের সগীরা কবীরা জানা অজানা সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।

“হে চাচা জান ! আপনি যদি পারেন, তবে দৈনিক একবার করে এই নামায পড়বেন। যদি দৈনিক না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার পড়বেন। যদি সপ্তাহে না পারেন, তবে মাসে একবার পড়বেন। যদি মাসে না পারেন, তবে বছরে একবার পড়বেন। যদি এটাও না পারেন, তবে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামায পড়বেন ( তবুও ছাড়বেন না)”।

★যে বিষয় গুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিতঃ

আমরা ভুলো মনে কিংবা আবেগের বশবর্তি হয়ে অনেক সময় এ রাতের করনীয় থেকে তাতপর্যের প্রকৃত অর্থ থেকে দূরে সরে যাই। এটা মোটেই ঠিক না।। মাঝে মাঝে দেখা যায় আমাদের আম্মুরা আমাদের বোনেরা বাসায় হালুয়া-রুটি বানাতে ব্যস্ত থাকেন তা একেবারেই অনুচিত। বলা হয় শয়তানই এ রাতে মানুষকে ইবাদত থেকে দূরে রাখার জন্য মানুষকে এসব কাজে ব্যস্ত রাখে। অনুরূপভাবে মসজিদ-মাজারে খিচুড়ি-ফিরনি এসবও বাহুল্য। অনেক জায়গায় তো এসব নিয়ে শোরগোল-মারামারি পর্যন্ত হয়। ইবাদতের রাত কেটে যায় হেলায়-অবহেলায়। আতশবাজি, তারাবাজি, বোমাবাজি ইত্যাদি যেন না হয় সেজন্য মা-বাবা, এলাকার মুরবি্ব ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষভাবে নজরদারি করতে হবে। এছাড়া ইবাদত করার আড়ালে কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে কি-না সেদিকেও সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। হাদিসে কয়েক ধরনের লোকের কথা এসেছে। যারা এ রাতেও আল্লাহর করুণা ও দয়া থেকে বঞ্চিত। তাদের মধ্যে হিংসুক, মুশরিক, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী, জাদুকর, চাঁদাবাজ, ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণী, সুদখোর ও অত্যাচারী সৈনিক অন্তর্ভুক্ত। অতএব, তাদের বেশি করে এ রাতে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে এসব পাপ আবার না করার দৃঢ়সংকল্প করা উচিত। অনেকে শবেবরাতের পর দিন অর্থাৎ ১৫ শাবান রোজা রাখেন। এটি কেবল একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, তাও দুর্বল। অতএব, তা শবেবরাতের উসিলায় নয়; বরং এমনিতে আরবি মাসের ১৫ তারিখ আইয়্যামে বীয উপলক্ষে রাখা যেতে পারে। সবশেষে কথা হলো, পাপমুক্ত হয়ে রমজান মাসকে স্বাগত জানানোই এ রাতের তাৎপর্য। অতএব এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে সারারাত ইবাদত ও প্রার্থনায় কাটাতে পারলে তা-ই হবে এ রাতের সঠিক মূল্যায়ন। আলোকসজ্জা, হালুয়া-রুটি আর আতশবাজির মেলা এ রাতের পবিত্রতায় আঘাত হানে।

★★আর প্রায় সময়ই আমরা অনেকেই একটা ভুল করে থাকি বা ভুল হয়ে যায় আর সেটা হল সারা রাত নফল নামাজ কে প্রাধান্য দেই আর দিতে গিয়ে ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, ফলে পড়া হয়না ফজরের নামাজ যেটা আমাদের জন্য ফরজ ঘোষনা করা হয়েছে। সুতরাং মাথায় রাখতে হবে ফরজ যাতে ছুটে না যায়।

★★ইসলামের (শরীয়তের) দৃষ্টিতে জীবনসঙ্গী কেমন হওয়া উচিত?

★★ইসলামের (শরীয়তের) দৃষ্টিতে জীবনসঙ্গী কেমন হওয়া উচিত?

এ কথা হয়তো কারোরই অজানা নয় যে, মানবজীবনের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য পরিবার অপরিহার্য। নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গড়া হয়েছে মানবসমাজ। আর নারীর প্রবল আকর্ষণ প্রকৃতিগত করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন “মানবকুলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তানসন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মতো আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগবস্তু। আর আল্লাহর কাছেই হলো উত্তম আশ্রয়।”(সূরা ইমরান: ১৪)।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অকৃত্রিম মিলনই হলো তাদের প্রাকৃতিক দাবি। এ মিলন যদি হয় লাগামহীন পন্থায় তবে সমাজ ও সভ্যতায় বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়াই অবধারিত। বস্তুত আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-পন্থা অনুযায়ী নারী-পুরুষের সঠিক সম্পর্কের ওপরই নির্ভর করে সমাজ ও সভ্যতার সুস্থতা ও নিরাপত্তা। আর তাদের উভয়ের মধ্যে খোদায়ী বিধি অনুযায়ী এ সম্পর্ক কেবল বিয়ের মাধ্যমেই হতে পারে। বিয়ের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাতে সূচনা হয় তাদের পারিবারিক জীবনের।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, একদা নবী করিম সা. যুবকদের লক্ষ্য করে বললেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যে বিয়ের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত রোজা পালন করা।

(বুখারী ও মুসলিম)।

পারিবারিক জীবন ছাড়া মানুষের দাম্পত্য জীবন কোনো অবস্থাতেই সুখের হতে পারে না। অতঃপর তাদের থেকে জন্ম নেয় সন্তানসন্ততি। সন্তান লালনপালন ও সুশিক্ষার জন্য পারিবারিক জীবন অপরিহার্য। মাতৃক্রোড়কে বলা হয়েছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। আল্লাহ তায়ালা প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা, দয়া, স্নেহ, সহানুভূতি মানুষের প্রকৃতিজাত করে দিয়েছেন। সন্তানের প্রতি পিতামাতার স্নেহ, দয়া এবং পিতামাতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রেমপ্রীতি মানুষের চিরন্তন প্রকৃতিজাত নিয়ম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদেরই যুগল থেকে তোমাদের পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব, তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অৃনুগ্রহ অস্বীকার করে।’ (সূরা নাহল: ৭২)।
আদর্শ গৃহ গড়ার প্রথম সোপান হলো, এ গৃহের জন্য আদর্শময়ী সতী-সাধ্বী স্ত্রী নির্বাচন করা। তাই দাম্পত্য জীবন আরম্ভের প্রাক্কালেই সহধর্মিণীর দ্বীনদারিতা ও ধার্মিকতা দেখে নেয়া একান্ত জরুরি।

রাসূল (সা.) বলেছেন, এমন সতী-সাধ্বী স্ত্রী বরণ করা উচিত, যে তোমাকে তোমার দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়ে সাহায্য করে, যা সব সম্পদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ রাসূল সা. অন্যত্র বলেছেন, ‘পুণ্যময়ী ও অধিক সন্তানপ্রসূ নারীকে বিয়ে করো। কেয়ামতে তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে সব আম্বিয়ার কাছে আমি গর্ব করব।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৩/২৪৫)।

সতী ও সাধ্বী পত্নী যেমন পুরুষের জন্য বিরাট সৌভাগ্যের বিষয় তেমনি অসতী পত্নী তার পক্ষে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়। রাসূল সা. বলেছেন,‘সতী স্ত্রী এক সৌভাগ্যের সম্পদ। যাকে তুমি দেখে পছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করে, আর তোমার অবর্তমানে তার ব্যাপারে ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত থাকে।পক্ষান্তরে অসতী স্ত্রী দুর্ভাগ্যের আপদ; যাকে দেখে তুমি অপছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করতে পারে না। যে তোমার ওপর মানুষের হামলা চালায়।আর তোমার অনুপস্থিতিতে তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হতে পারে না।’(সিলসিলা সহিহা ১৮২, ইবনে হিব্বান)।অন্যথায় তার সোনার সংসারে সুখের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।

আল্লাহর নবী সা. বলেছেন, ‘যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলেদের কিংবা মেয়েদের) বিয়ে দাও। যদি তা না করে (শুধু দ্বীন ও চরিত্র দেখে তাদের বিয়ে না দাও বরং দ্বীন বা চরিত্র থাকলেও শুধু বংশ, রূপ বা ধন-সম্পত্তির লোভে বিয়ে দাও) তবে পৃথিবীতে বড় ফিতনা ও মস্ত ফাসাদ, বিঘ্ন ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।’ (ইবনে মাজাহ-১৯৭)।

আল্লাহ পাক আল কোরআনে বলেছেন, তোমরা বিয়ে করো যাদের তোমাদের ভালো লাগে (সূরা মায়িদা: ৪)।এর অর্থ হলো, বিয়ে-ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন তার ভালোলাগা বৈধ নারীকে বিয়ে করে। (তাফসির আর-রাজি: ৯/১৭১)।

আশ-শাওকানি রা. বলেছেন, যেসব নারীর প্রতি তোমাদের চিত্ত আকৃষ্ট হয় এবং যেসব নারী তোমাদের মনঃপূত হয় তোমরা তাদের বিয়ে করো (ফাতহুল কাদির: ১/৪৪৯)।

মুহাম্মাদ ইবনে মুসলিমা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, যখন মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ কোনো পুরুষের অন্তরে কোনো নারীর বিয়ের প্রস্তাব জাগরূক করে তখন তাকে দেখেশুনে যাচাই-বাছাই করা দোষনীয় নয়। (ইবনে মাজাহ: ১৮৬৪)।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখন সে যেন তার এমন কিছু দেখে, যা তাকে তার সাথে বিয়েতে উৎসাহিত করে।’ (আবু দাউদ: ২০৮২)।

কনেকে একবার দেখে পছন্দ করা গেলে একবার দেখাই বিধান। কোনো কোনো নারীকে একবার দেখে তার সাথে বিয়ের মতো গুরত্বপূর্ণ চুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে তাকে একাধিকবার দেখা বিহিত। ফিকহের ভাষ্য হচ্ছে, পাত্রের জন্য বিহিত পাত্রীকে বারবার দেখা, এমনকি যদি সে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনবারের বেশিও দেখে যাতে তার সামগ্রিক বিষয়টি পাত্রের কাছে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়।’ (আর-রামলি, নেহায়া: ৬/১৮৬)।

যদি পাত্র পাত্রীকে একবার দেখেই পরিতৃপ্ত হয়ে যায়, তবে তার জন্য একবারের অতিরিক্ত দেখা হারাম। কারণ এই দেখা হালাল করা হয়েছে অনিবার্য প্রয়োজনে।