Wap4dollar.com

Saturday 29 July 2017

★★★ শাহজালাল (রহ.)এর ধর্ম প্রচার =>

শাহজালাল (রহ.)এর ধর্ম প্রচার -

১৪ শতাব্দীতে যেসব অলি-আউলিয়ারা বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রেখেছেন তাদের একজন হলেন হযরত শাহজালাল ইয়েমেনী (রহ.)।

ভারত উপমহাদেশে খাজা মইনুদ্দীন চিশতী (রহ.)এর পরে এই ভূখণ্ডে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী (রহ.)।

বাংলাদেশ আসাম তথা বৃহত্তর বঙ্গ ইসলামের আলোকে আলোকিত করার ক্ষেত্রে যাঁর নাম সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং এদেশের সূফি, দরবেশ, আউলিয়াগণের মাঝে যাঁর প্রভাব ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় তিনি সুলতানে বাংলা, হযরত শাহ্জালাল মুজাররদ ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

নামঃ হযরত শাহ্জালাল মুজাররদ ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর পূর্ণ নাম জালালুদ্দীন জালালুল্লাহ্। আপামর জনসাধারণের মাঝে প্রচলিত নাম হযরত শাহ্জালাল (রহ.)।

জন্ম ও বংশ পরিচিতি: ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুসারে গবেষকগণের মতে হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৭৪৬ হিজরী সনে ১৯শে জিলক্বদ ওফাত (ইন্তেকাল) বরণ করেন। সে মতে তাঁর ১৫০ বছর জীবনকাল ধরে জন্ম সাল হয় ৭৪৬-১৫০= ৫৯৬ হিজরী। তাঁর জন্মস্থান হল ইয়েমেনের তাইজ নগরীর কুন্যা নামক স্থানে।

শিক্ষাঃ হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বাবা-মা শৈশবেই মারা যান। তখন তাঁর লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার ভার গ্রহণ করেন তাঁর বুযুর্গ মামা সৈয়দ আহ্মদ কবির সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি সোহরাওয়ার্দী ত্বরিকার একজন প্রখ্যাত সুফি দরবেশ এবং মক্কার বিশিষ্ট আলেম ছিলেন। হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না।

তবে পর্যটক ইবনে বতুতার বর্ণনায় হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে তাঁর মুরিদ কর্তৃক মাওলানা সম্বোধন থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে তিনি বিদ্যা শিক্ষায় শিক্ষিত একজন আলেম ছিলেন।

সিলেটের পথ ধরে বাংলায় আগমনঃ বিভিন্ন জীবনীকারগণের বৃত্তান্ত থেকে জানা যায় যে, হযরত শাহ্জালাল বাংলাদেশের সিলেটের আগমনের পূর্বে একটি স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নের বৃত্তান্ত পীর মুর্শিদ ও মামা সৈয়দ আহ্মদ কবীর সোহ্রাওয়ার্দী এবং সংগীয় পীর বাহাউদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দীর নিকট বর্ণনা করেন।

স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে অবিলম্বে হিন্দুস্তান যাত্রার আদেশ দেন। স্বপ্নের ইঙ্গিত মতে মুর্শিদ একমুষ্ঠি মাটি তাঁর হাতে দিয়ে বলেন, এই মাটির বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ যেখানে পাইবে সেখানেই তুমি অবস্থান ঠিক করিবে।

তিনি আরও বললেন, এই মৃত্তিকা মুষ্ঠি যে স্থানে পরিত্যাগ করিবে সে স্থানের মহত্ত্বের আর তুলনা থাকিবে না। পীরের নির্দেশের পর হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাংলাদেশে আসার আগে জন্মভূমি ইয়েমেন গমন করেন।

সেখানে পূর্বপুরুষ ও মাতা-পিতার মাযার যিয়ারত করেন এবং উলুহিয়াতের তত্ত্ব প্রচার করেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও গুণে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে লোক তাঁর দিকে ধাবিত হয়। এতে ইয়েমেনরাজ ঈর্ষান্বিত হয়ে হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে বিষ মিশ্রিত শরবত দ্বারা কামালত পরীক্ষা করতে চাইলেন।

হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিষ মিশ্রিত শরবত বিসিমল্লাহ বলে পান করলে সে বিষের প্রতিক্রিয়ায় উল্টো ইয়েমেন রাজই মৃত্যুবরণ করে। ইয়েমেনের পরবর্তী রাজা শাহ্জাদা আলী পিতার মৃত্যু এবং শাহ জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অলৌকিক ঘটনা দেখে তাঁর ভক্তে পরিণত হন এবং শাসকের সিংহাসনে না বসে শায়খ শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সাথী হতে চাইলেন কিন্তু হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে রাজ্য পরিচালনার ভার দিয়ে ইয়েমেন হতে যাত্রা করেন।

ইয়েমেন হতে হযরত শাহ্জালাল বাগদাদ আসেন। সিলেট বিজয় সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের আমলে ৭০৩ হিজরীতে শাহ্জালাল ইয়েমেনী আধ্যাত্মিক শক্তির সাহায্যে সিলেট বিজয় করেন।

বর্ণিত আছে যে, গৌড় গোবিন্দ কর্তৃক শেখ বুরহানুদ্দীনের শিশু পুত্র হত্যার প্রতিবিধানার্থে প্রেরিত সিকান্দার গাজীর বাহিনী গৌড় গোবিন্দের ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতার কারণে বারবার পরাভুত হয়।

অবশেষে হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর অনুসারী ৩৬০ আউলিয়া সহযোগে গৌড় গোবিন্দের ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতাকে পরাভূত করে সিলেট বিজয় করা হয়।

ইন্তেকালঃ হযরত শাহজালাল (রহ.)এর মৃত্যুবরণের সঠিক তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। কিন্তু ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ১৫০ বছর বয়সে ৭৪৭ হিজরি ১৩৪৭ সালে ওফাত গ্রহণ করেন বলে জানা যায়।

তিনি সিলেটেই সমাহিত হন এবং তাঁর সমাধিস্থল দরগা মহল্লা নামে পরিচিত।

No comments:

Post a Comment