"শায়খ"
পর্ব এক.....
সবসময় ভাবতাম বিয়ে মানেই এক প্লেটে দুজনের খানা
খাওয়া,গ্লাসের একই দিকে মুখ লাগিয়ে পানি পান
করা,একই মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করা.......
ইত্যাদি ইত্যাদি!!
শুধু অামি না,হিদায়াহর পর অাশি শতাংশ বোনের
চিন্তা-ই থাকে এমন।অামিও তাই এসব ভেবে পুলকিত
হতাম,সাজদায় গিয়ে অাকুল হয়ে রব্বকে নিজের
প্রয়োজন বলতাম,খুব শীঘ্রই বিয়ে হওয়ার জন্য দুঅা
করতাম।চোখে কেবল একটা স্বপ্ন থাকতো,একটা ছোট্ট
ঘর,বিছানায় একটা বালিশ,একটা প্লেট,একটা গ্লাস,কিছু
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র,কিছু তাফসীরের বই,দুইটা
কুরঅান,একটা জায়নামাজ............
ব্যস এতটুকুই!এতটুকু দিয়েই ছোট্ট একটা জান্নাত
সাজানোর স্বপ্ন দেখতাম অামি।
"বিয়ে" একটা ইবাদত হলেও,অামার চোখে তখন
"রোমান্টিসিজম" একটা ইবাদত ছিল।
বিয়ে মানেই যে কেবলমাত্র রোমান্টিসিজম নয়,বরং
অন্নেক.......
অঅঅন্নেক গভীর একটা ব্যাপার,তা বুঝলাম অামার
জীবনে শায়খ অাসার পর।
হু!'শায়খ'
অামি উনাকে শায়খ বলে ডাকি।উনি অালেম
নন,অালিয়ায়ও পড়েন নি তিনি,পড়েছেন জেনারেল
লাইনে।সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও পরিচিত মুখ নন তিনি।
তার একেকটা পোষ্টে কয়েকশত লাইক,শতাধিক
কমেন্ট,একগাদা শেয়ার হয়না।তারপরও তিনি এমন একজন
মানুষ,যাকে না দেখলাম বুঝতাম ই না,প্রকৃত দ্বীনদার
কেমন হয়।
পাঁচ ভাইয়ের মাঝে মেঝো জন অামার শায়খ।
জাহেলিয়াতে অাচ্ছন্ন পরিবারের সকল বিদ্রুপকে
উপেক্ষা করে তিনি অামাকে বিয়ে করেছেন
মাসজিদে,মোহর ছিলো দশহাজার টাকা......
কি নাক সিঁটকাচ্ছেন?ভাবছেন মাত্র দশ হাজার টাকা
কিসের মোহর!!
প্রতি মাসে নয়হাজার টাকা যার বেতন ছিলো,তার
পক্ষে কয়েক লাখ টাকা দেনমোহর দিতে বিলম্ব
হলেও,ধার্য করাটা নিশ্চয়ই অসম্ভব ছিলো না।অামার
বাবা যখন পুরোই প্রশ্নবিদ্ধ মোহর নির্ধারণের এই অঙ্ক
দেখে,অামার শায়খ একদম প্রশান্তির হাসি হেসে
বলেছিলেন,"সাফিয়্যা মায়ের মোহর ছিল কেবলমাত্র
তার মুক্তি,অার বাকি অাম্মাজানদের মোহর বারো
উকিয়ার বেশী ছিলোনা।"
জানিনা বাবা কি বুঝেছিলেন,তবে এই নিয়ে অার
উচ্চবাচ্য করেন নি।
শ্বশুর বাড়িতে এসে দেখলাম অামার হক্ব অাদায়ের জন্য
তিনি অালাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছেন।শ্বশুরবাড়ির
লোকজন কেউ অামাকে ওয়েলকাম তো করেইনি,বরং
বিদ্রুপের হাসি হেসেছিলেন।বড় জা তো টিপ্পনী কেটে
বলেই ফেলেছিলেন,
'অারও কত কি দেখব।বোরকা,নিকাব,মোজা পরে কোন
ভুতনি অাসছে কে জানে।'
অামার মন খারাপ হলেও শায়খের মুখে দেখেছিলাম
একগাল হাসি।হেসে হেসেই উনি বলে উঠলেন,সূরা
অাহযাব,অায়াত তেত্রিশ,অালহামদুলিল্লাহ,মাশাঅা
ল্লাহ.......
ওই মুহুর্তে লোকটাকে অামার পাগল ছাড়া কিছু মনে
হয়নি.....
অাশ্চর্য হয়েছিলাম রাত্রীবেলা......
বিয়ে নিয়ে একগাদা স্বপ্ন দেখলেও রাতটুকু নিয়ে অদ্ভুত
একটা চিন্তা ছিল।কিন্তু উনাকে দেখলাম বেশ হাসিমুখ
নিয়েই রুমে অাসলেন,অামায় চড়া গলায় সালাম
দিলেন,এবং অামার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজলেন।
অামি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে ছিলাম,কি করা উচিৎ
মাথায় অাসছিলো না।এরই মাঝে উনি গুণগুণ করে পড়া শুরু
করেছেন,
"হাল অাতাকা হাদিসুল গশিয়াহ.......
উ জুহুই ইয়াওমা ইযিন খশিয়াহ......
অামিলাতুন নছিবাহ.........
........................
............................
................................
সুম্মা ইন্না অালাইনা হিসাবাহুম!"
যতটা সময় উনি পড়ছিলেন অামি মন্ত্র মুগ্ধের মতন উনার
দিকে তাকিয়ে ছিলাম।বারবার মাথায় বাড়ি
খাচ্ছিল,এটা সুন্নাহ না?রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু অালাইহি
ওয়া সাল্লাম তো অাম্মাজানের কোলে মাথা রেখে
কুরঅান তিলাওয়াত করতেন.......
কি একটা প্রশান্তি!কি অদ্ভুত প্রশান্তি!অামি কেঁদে
ফেলেছিলাম।উনি কোল থেকে মাথা না সরিয়েই
অামায় জিজ্ঞাস করলেন ইশা পড়েছি কিনা।অামি না
সূচক মাথা নাড়তেই উনি একলাফে উঠে
পড়লেন,নির্দেশের স্বরে ইশা পড়তে বললেন।
অামিও ইশার স্বলাত অাদায় করলাম।সাজদায় গিয়ে
অার মাথা তুলতে পারছিলাম না।কান্নায় ভেঙে
পড়েছিলাম।কিসের কান্না বুঝিনি,শুধু কেঁদেই
গেছিলাম।স্বলাত শেষ করে উঠেই দেখি তিনি
তন্দ্রাচ্ছন্ন।অামিও অার না ডেকে ঘুমিয়ে পরি।রাতের
খাওয়াটুকুও হয়নি সেদিন।মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো
চোখেমুখে হালকা মতন পানির ছিটা লাগায়।উঠে দেখি
উনি বড় বড় চোখে তাকিয়ে অাছেন,ঘড়িতে সবে
অাড়াইটা বাজে।ফজরের এখনও ঢের বাকি।উনি এত
তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙালেন কেন!
উঠে বসতেই উনি যন্ত্রের মতন বলে চললেন....
"এত গাঢ় ঘুম কারও হয়?রাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ডেকে
দেননি কেন? রাতে নিশ্চয় না খেয়ে ছিলেন?শরীরের
একটা হক্ব অাছে না?নিশ্চয় খিদা লেগেছে।তাড়াতাড়ি
উঠুন,হাতমুখ ধুয়ে অাসুন,অামি তরকারি গরম করেছি।ভাত
বাড়ছি চলুন........"
উনি এমনভাবে কথা বলছিলেন যেন অামি উনার কত
দিনের চেনা।কথায় একটুও জড়তা নেই।অামার একটু
অস্বস্তি লাগলেও ভালই লাগছিল।ফ্রেশ হয়ে অাসতেই
দেখি উনি খাবার সামনে নিয়ে বসে অাছেন।তবে এক
প্লেটে না,অালাদা অালাদা প্লেটে,গ্লাস ও দেখছি
দুইটা......
অামি পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম,কোলে
মাথা রেখে কুরঅান তিলাওয়াত করা সুন্নাহ,এটা
জানেন,অার একই পাত্রে,একই গ্লাসে খাওয়া যে
সুন্নাহ,ওটা কি তিনি জানেন না?
চাপা একটা অভিমান জমা হলো মনে।অভিমান নিয়েই
খেতে বসলাম................
চলবে ইনশাআল্লাহ!
"শায়খ"
পর্ব দুই.....
খাওয়ার সময় লক্ষ করলাম তিনি সবকিছুই ঠিকঠাক
রেখেছেন।অর্থাৎ দস্তরখানা বিছিয়েছেন,এক হাঁটু
বিছিয়ে অারেক হাঁটু উঠিয়ে বসলেন,শব্দ করে
বিসমিল্লাহও পড়লেন...........
সামনে থেকে অল্প অল্প করে খাচ্ছেন,খাওয়া শেষে
হাতের অাঙুলগুলো যথাক্রমে মধ্যমা,শাহাদাত,বৃদ্ধা
অাঙুল চেটে খাচ্ছেন।পানি খাওয়ার সময়ও দেখলাম
একাগ্রতা!
বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে গ্লাস ধরে তিন
নিঃশ্বাসে পানি পান করলেন।
এমনকি খাওয়া শেষে দস্তরখানা অাগে উঠিয়ে,তারপর
তিনি জায়গা থেকে উঠেছেন।
অামার অশান্তি লাগছিল.......
যে লোকটা এতকিছু মেইনটেন করেন,সে স্ত্রীর সাথে
একই পাত্রে খেলেননা কেন?!মনে এক ধরণের ক্ষোভ সৃষ্টি
হচ্ছিল।অাসলে কিছু পুরুষ থাকেই এমন,দেখা যায় হজ্জ
করে এসেছে,অথচ স্ত্রীর সাথে ভালবাসা প্রকাশ করেন
কম,হায়েজের সময় স্ত্রীকে অশুচি মনে করেন,এমনকি
স্ত্রীকে সবসময় নিচু চোখে দেখেন!
উনিও বোধহয় তেমনই!গা জ্বলে যাচ্ছিলো রাগে।মন
চাচ্ছিল অায়শা অাম্মাজানের মতন করে প্লেট টা
ভেঙে ফেলি!!
খাওয়া বন্ধ করে রাগে ফুঁসছিলাম,উনি কোথায়,কি
করছেন সেদিকে খেয়ালও ছিল না।একদৃষ্টে ভাতের
দিকে তাকিয়ে অাছি,এমন সময় কানে গরম নিঃশ্বাস
অনুভব করলাম!কে যেন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে
বললো,
"অাউযুবিল্লাহ পড়ো,রাগ জাহান্নাম থেকে অাসে"
চমকে তাকিয়ে দেখি উনি,অামার শায়খ,একগাল হাসি
নিয়ে অামার দিকে চেয়ে অাছেন।অামি অাবারও
হতবাক,এই মূহুর্তে কি করা উচিৎ সেটাই খুঁজে পাচ্ছিনা।
অন্য কেউ হলে হয়তো লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলতো।
কিন্তু অামি অপলক চেয়ে ছিলাম।হাসিতে দাঁতের মাড়ি
দেখা যাচ্ছে,লম্বাটে চেহারা,গালভর্তী দাঁড়ি,হাসির
চোটে তার চোখগুলোও যেন হাসছে,নাকে একটা
কালোমতন দাগ..... অাঘাত পেয়েছেন মনে হয় কখনও.........
কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানিনা,হুশ ফিরলো উনার চোখ
মারা দেখে।
জ্বি হ্যাঁ!ঠিকই শুনেছেন,অামার চাহনী দেখে অামায়
পরপর তিনবার চোখ মারলেন উনি!!
হুজুর মানুষ চোখ মারে.......
ভাবা যায়!!!
লজ্জায় চোখ নামিয়ে উনার মুখে মুখে অাউযুবিল্লাহ
পড়লাম।ধীরে সুস্থে খাবার শেষ করলাম।ঘড়িতে দেখি
তিনটা পনের বাজে।তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য অযু করে
এলাম।এসে দেখি উনি বৈঠকে অাছেন।সম্ভবত তাশাহুদ
পড়ছেন,অামি অাবারও খেয়াল করলাম তাকে।চোখেমুখে
কি একটা প্রশান্তি,ঠোঁটে একপ্রকার হাসির অাভা
লেগে অাছে।মনে হচ্ছে তিনি বুঝি তার খুব কাছের কারও
সাথে খোশগল্পে মগ্ন!অামি অভিভূত হয়ে তাকিয়ে
ছিলাম।উনাকে সালাম ফেরাতে দেখে অামি তড়িঘড়ি
করে চোখ নামালাম।উনি অামায় নামায পড়তে বলে
বিছানায় বসলেন।অামি স্বলাত শেষ করে দেখি এখনও
চারটা বাজেনি।ফজরের ওয়াক্ত শুরু হবে পৌনে পাঁচটায়।
ভাবলাম একটু কুরঅান পড়বো,কিন্তু এখানে কুরঅান
কোথায় তা তো জানিনা.......
উনাকে জিজ্ঞাস করতেই উনি অামায় বিছানায় বসতে
বললেন।অাবারও রাতের মতন অামার মাথায় কোল
রেখে......
ইশ!না না!কি সব বলছি!
অামার কোলে মাথা রেখে বললেন,
"চলো মুখে মুখে পড়বে।বলো অাউযুবিল্লাহ...
...................
বিসমিল্লাহ................
হাল অাতাকা হাদিসুল গশিয়াহ......."
অামিও পড়া শুরু করলাম,
'হাল অাতাকা হাদিসুল গশিয়াহ!
উ জুহুই ইয়াওমা ইযিন খশিয়াহ......
অামিলাতুন নছিবাহ.........
................
.....................
..........................."
উনার মুখে মুখে পড়ছিলাম।কখনও কখনও একটা অায়াতকে
কয়েকভাগে পড়েছি,ধীরে ধীরে পুরো সূরা শেষ করলাম।
অামি মন্ত্রমুগ্ধ!এই মানুষটাকে বুঝতে পারছিনা!কখনও
ভাবিনি এভাবে কুরঅান পড়বো,কখনও এভাবে কুরঅান
পড়ার স্বপ্ন দেখিনি।মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধায় অামি
একাকার হয়ে ছিলাম।না চাইতেই এত বড় একটা ঘটনার
সাক্ষী করেছেন অাল্লাহ অামায়!কৃতজ্ঞতায় চোখে
পানি চলে এলো!মনে মনে শুধু পড়ছিলাম,'অালহাম
দুলিল্লাহ!অালহামদুলিল্লাহ!অালহামদুলিল্লাহ অালা
কুল্লি হাল......'
সূরাটা শেষ করেই তিনি বলা শুরু করলেন,
--বলোতো অামিনা,এটা কোন সূরা ছিলো?
--অাল গশিয়াহ।
--জানো এটা মাক্কি সূরা,গাশিয়াহ কিয়ামতেরই
অারেকটা নাম,অামি রাতেও এটা পড়েছিলাম,মনে
অাছে?অামার খুব প্রিয় সূরা এটা।তোমার ভাল লাগেনা
সূরাটা?
--অামি তো অালাদাভাবে কখনও ভাবিনি এটা নিয়ে।
তবে ভালই লাগে....!
--হ্যাঁ!হ্যাঁ!ভাল লাগবেনা কেন বলো?এটাও তো তোমার
অামার রব্বেরই বাণী,তাইনা?পাশাপাশি সূরাটায়
দেখো,প্রথম সাত অায়াতে কিয়ামতের কথা,
জাহান্নামের কথা,জাহান্নামীর শাস্তির কথা বলা
অাছে।তারপর অাট থেকে ষোল অায়াতে কেবলমাত্র
তাদের কথা বলা হয়েছে,যা অামরা সবাই হতে চাই।
বলোতো কাদের কথা?
--কাদের কথা?বলতে পারছিনা!অামি কখনও অর্থসহ
পড়িনি সূরাটা!
--কেন পড়োনি অামিনা!অাল্লাহর প্রথম বাণীই তো
হলো,ইকরা।পড়ো......
পড়ার তাগিদ স্বয়ং তোমার অামার রব্ব দিয়েছেন।
তারপরও পড়োনি কেন?অাচ্ছা পড়োনি সমস্যা নেই।
অামার সাথে পড়বে।এখন শুনো কি বলি.....
এই অামিনা!শুনছো?নাকি ঘুম অাসছে?
--না না!শুনছি,অাপনি বলুন।
--হ্যাঁ শুনো,পরের ষোল অায়াত অবধি অাল্লাহ
জান্নাতিদের কথা বলেছেন।তারপর সরাসরি অস্বীকার
কারীদের,অবিশ্বাস কারীদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন,কি
প্রশ্ন ছুঁড়েছেন জানো?তিনি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন,সৃষ্টি
নিয়ে,এই উট,অাকাশ,পাহাড়,জমিন নিয়ে.....
প্রকৃতির ভারসাম্য নিয়ে।তারপর রসূলুল্লাহকে উপদেশ
দেওয়ার অাদেশ করে অাবার মনে করিয়ে দিয়েছেন
যে,অামাদের সবাইকে তার কাছে ফিরে যেতে হবে।
অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে তিনিই হিসাব নিবেন......
এই অামিনা,জানো এই অায়াতটা যখন পড়ি,
"ইন্না ইলাইনা ইয়াবাহুম" কেমন স্বস্তি লাগে!!একদিন
অামরা অামাদের রব্বের কাছে যাব।তখন কি হবে বলো
তো?খুব লোভ হয়,ওই অায়াতটা শুনতে।কোন অায়াতটা
জানো,ওই যে......
--সালামুন ক্বওলাম্মির রব্বির রহীম,তাইনা?
--হ্যাঁ,হ্যাঁ,সূরা ইয়াসিনের অাটান্ন নং অায়াত টা......
দূর থেকে অাযান শোনা যাচ্ছে,তিনি অামার কোল
থেকে মাথা উঠিয়ে ইস্তেঞ্জায় গেলেন,ওযু করে এসে দুই
রাকাত নামায পড়লেন।তারপর অামার দিকে তাকিয়ে
বললেন,
"চলো অাজকে অামি জামাঅাত করে নামায পড়াই।তুমি
পিছনে দাঁড়াও অামার।এসো....... "
অামি একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি।অার পাঁচটা বাসর
রাত কেমন হয় অামি জানিনা।তবে অামার বাসর রাত
অাল্লাহর রহমতে পরিপূর্ণ,একদম পরিপূর্ণ........
অাল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা ভরে মাথা নোয়ালাম অামি।
কে জানে,এত প্রশান্তিময় সাজদা হিদায়াহর পর অাগে
কখনও দিতে পেরেছিলাম কিনা!
ইনশাআল্লাহ চলবে.............
"শায়খ"
পর্ব তিন......
ফজরের পর অামি মূর্তির মতন বসে ছিলাম।নতুন বউ
হিসেবে ফজরের পর কি করা উচিৎ অামি বুঝতে
পারছিলাম না।তারউপর রাত অাড়াইটা হতে জেগে
অাছি।বালিশে একটু হেলান দিতেই ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম
যখন ভাঙলো,তখন বড় জার বিদ্রুপ শুনতে
পাচ্ছিলাম,ঘড়িতে প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে......
অামায় উঠে বসতে দেখে বড় জার টিপ্পনী শুরু হলো......
--ও মা,এই ঘরে অাসেন।নবাবজাদির ঘুম ভাঙছে।হিহি....অ
ামার বিয়ের পরদিন অামি কোন সকালে উঠছিলাম,অার
এই মেয়ে!!
মা গো মা!!গোসলও করোনি এখনো!ছিহ!কি অশুচি!নাপাক
একটা মেয়ে......
এতকিছু জানো,অার এটা জানোনা যে, গোসল কখন ফরজ
হয়?কি লজ্জা!ও মা দেখে যান,অাপনার ছেলে মসজিদে
গিয়ে কোন খবিশকে তুলে অানছে.........
অারও কতক্ষণ চলতো উনার টিপ্পনী কাটা কি জানি!
অামি উনার কথার মাঝেই বলে উঠলাম....
--অাসসালামু অালাইকুম!কেমন অাছেন অাপা?
--কিসের অাপা?বড় বউ অামি এই সংসারের,ভাবি
ডাকবে,বুঝছো?সালাম দিয়ে নিজেকে পীরনি ভাবো?
এহহ!অাইছে বড় পীর!যাও গোসলে যাও।নাপাক
কোথাকার।কেন যে এই নাপাকের ঘরে অাসছি,কে
জানে!থুঃ!
কি অদ্ভুত মানসিকতা!যা তা বলে চলে গেলেন।উনি বের
হয়ে যাওয়ার পরপরই শায়খ এলেন ঘরে।
--অাসসালামু অালাইকুম!ঘুম ভাঙলো?
ক্লান্ত ছিলে বলে ঘুমিয়ে পরেছিলে,তাই অার ডাকিনি।
কিছু তো খাওনি না?ইশ!খাবে কিভাবে?এখনও তো
হাতমুখও ধোও নি।যাও তুমি হাতমুখ ধুয়ে অাসো।
--ওয়া অালাইকুমুস সালাম!অাসলে....
অামি তো মিসওয়াকের জন্য কিছু অানি নি।
--ওহ।!অামার একদম মনে ছিলোনা,দাঁড়াও অামি এখনই
ব্যবস্থা করি।
দুই মিনিটের মাথায় কোথা থেকে একটা ডাল এনে
দিলেন তিনি।অামার অাবারও প্রচুর অভিমান হলো।
নিজেরটা দিলে কি হতো যে অারেকটা এনে দিতে
হলো?সুন্নাহ তো একই ডাল দিয়ে দুজনের মিসওয়াক
করা।লোকটার মনে হয় শূচীবায়ু অাছে।সেসব নিয়ে না
ভেবে ইস্তেঞ্জায় গেলাম।এসে দেখি ওমা!উনি প্লেট
সাজিয়ে বসে অাছেন।এই লোকটা কি খাওয়া ছাড়া কিছু
বুঝেন না?রাত অাড়াইটা বাজে খেলেন,এখন অাবার
সকাল অাটটা বাজতে না বাজতেই....!
কি অদ্ভুত!অামাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেই বলা
শুরু করলেন,
--অাজ তো ওয়ালিমা অাছে।সারাদিন ঝামেলায়
কাটবে।কখন খানা কপালে জুটবে কে জানে।তুমি
বসো,কয়েকটা খেঁজুর খাও অাগে।এগুলা অাজওয়া
খেঁজুর,দেশে পাইনি,সৌদি থেকে অানিয়েছি।জমজমের
পানি ছিলো,শেষ হয়ে গেছে।নরমাল পানি দিয়েই খাও।
শুনো ঘর ঝাড়ু দেওয়া হয়ে গেছে।রাতে খেয়েছিলাম
যে,প্লেট বাটি ধোয়াও শেষ।এখন কাজ বলতে,বিছানাটা
গুছানো বাকি,অার...........
অাচ্ছা,বাদ দাও।তুমি অাজ বিছানাটা গোছাও।কাল
থেকে অামিও জয়েন করব ইনশাআল্লাহ!এসে তাড়াতাড়ি
খাও।অামাকে অাবার ওদিকে যেতে হবে।ওয়ালিমার
কাজে কোনও ত্রুটি যেন না থাকে,তা নিশ্চিত করতে
হবে।শুনো,তুমি ঘর থেকে নড়িও না।অামি দেখছি মাকে
বুঝিয়ে পাঠাচ্ছি তোমার কাছে।এখনও দাঁড়িয়ে কেন?
বসো।
এবার খেয়াল করে দেখলাম,প্লেট একটা হলেও গ্লাস
কিন্তু দুইটাই অাছে।খাওয়ার এক পর্যায়ে,উনি অাচমকা
অামার থুতনিটা তুলে ধরে কিছু একটা খাইয়ে দিলেন।
অামি একটু চিবিয়েই বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে
অাছি,অার উনি খিলখিল করে হাসছেন।হাসতে হাসতে
পেট চেপে ধরেছেন!কি অদ্ভুত!উনি অামার মুখে খেঁজুরের
পরিবর্তে সুপারির দানা গুঁজে দিয়েছেন।তাও
এক্কেবারে কাঁচা!ইশ!কি বিদঘুটে স্বাদ!!
--বুঝলে অামিনা,মাঝে মাঝে অাহলিয়ার সাথে মজা
করা লাগে।তাকিয়ে দেখছো কি?মুখ থেকে ফেলো ওটা।
কস লাগছে না?ফেলো।বাকিটা খেয়ে শেষ করো,অামি
যাই কেমন?
হনহন করে বেরিয়ে গেলেন এইটুকু বলে।উনি চলে
যাওয়ামাত্র অামার হাসি পেলো।অামি শব্দ করে হেসে
ফেললাম।যাহোক,উন
ি বলে গিয়েছিলেন মাকে পাঠাবেন।কিন্তু প্রায় ঘন্টা
দুয়েক পার হওয়ার পরও মা অাসেন নি।অামার প্রচণ্ড
একা লাগছিলো।কয়েকবার ভাবলাম,বের হয়ে দেখব।
কিন্তু অচেনা জায়গা,তারউপর উনি বারণ করেছেন,তাই
অার বের হইনি।বাবাকে ফোন করে কিছুক্ষণ কথা বললাম।
তারপরও সময় কাটছিলো না দেখে ফেসবুকে লগিন
করলাম,রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বদলালাম,অাপুদের সাথে
কিছুক্ষণ অাড্ডা দিলাম।তারমাঝেই বড় জা এসে
পরেছেন।
--তোমার মত মেয়ে অামি জন্মে দেখিনি।কোথায় সকাল
সকাল উঠে শ্বশুর শ্বাশুরির সেবা করবে,তা না।মোবাইল
টিপছো।অবশ্য এটাই তো হওয়ার কথা।যেমন দেবা,তেমন
দেবী।এখন শুনো কি বলি,এত দেরী করে ঘুম ভাঙলো কেন?
রাতে কয়বার.....
হিহি!হাহাহা!ওমাগো!তবে হয়নি বলেই তো মনে হয়।
অামার দেওর কি পুরুষ নাকি?নপুংসক বলেই মনে হয়।না হয়
নাবিলা মেয়েটা ওকে ছেড়ে চলে যাবে কেন?নিশ্চয়
কিছু গরমিল অাছে।নাহয় এত ভাল......
নাবিলা!!!!!!
চমকে উঠলাম অামি!!
উনি বকবক করেই যাচ্ছেন।অামার সেদিকে খেয়াল নেই।
অামার শুধু রাতের কথা মাথায় ঘুরছে।সত্যিই তো উনি
অামার কাছে অাসেন নি।তাছাড়া এই নাবিলা টাই বা
কে?উনার প্রাক্তন?কই!অামায় তো বলেন নি।অস্থির
লাগছিলো।চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব
করছিলাম,সেটা মাথার একপাশে নাকি বুকে কে
জানে........
কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করলাম,
--অাপা!নাবিলা কে?
--অাবার অাপা?মা বাবা কি এতটুকু শিখিয়ে পাঠায়নি
যে,ঘরের বউকে ভাবি বলা লাগে?অবশ্য কি শেখাবেন
অার?কোনও মতে চোরের মতন গছিয়ে দিয়েছেন
মেয়েকে।অামার বিয়েতে সারে চার ভরি স্বর্ণ
এসেছিল,অার তোমার?হাহ!নাবিল
া তোমার বরের কোন জান্নাতি হুর,সেটা তোমার বর
থেকেই জেনে নাও।যত্তসব!
রাগে গজগজ করে চলে গেলেন উনি।এদিকে অামার
মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।নাবিলা কে?উনার প্রেমিকা?
নাকি প্রথম স্ত্রী?
কই উনি তো বলেন নি উনি ডিভোর্সি কিনা!
তাহলে?
নাকি সত্যিই উনি নপুং......
না না!কি সব ভাবছি!কিন্তু উনি ই বা কাল অামার কাছে
এলেন না কেন!!
ভাবছিলাম,অার তড়পাচ্ছিলাম!প্রচুর কষ্ট হচ্ছিলো........
.......
ওয়ালিমায় বাবা মা এসেছিল।ছোট বোনটার গায়ে
নাকি কে মরিচের গুড়া গোলানো পানি মেরেছে,সেসব
নিয়ে ব্যস্ত সবাই।অামার সেদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই!
দুপুরে এলেন উনি।কিছু প্রয়োজন কিনা খোঁজখবর নিলেন।
অাবার চলে গেলেন। সারাদিন অার দেখা নেই।ফিরলেন
মাগরিবের পর।অামি কিন্তু ততক্ষণ না খেয়ে অাছি।
অাসলে খিদার কষ্ট অনুভবই হচ্ছিলো না।মাথায় শুধু
'নাবিলা','নপুংসক' শব্দগুলো ঘুরছিলো।সারাদিন
কোনওমতে চোখের পানি অাটকে রেখেছিলাম।যখনই
উনি ঘরে এসে সালাম দিলেন,অার অাটকাতে পারিনি।
ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম।খুব চেষ্টা করে শুধু এটুকু
জিজ্ঞেস করলাম,
'নাবিলা এখন কোথায়?'
উনি অামার পাশে বসেই অামার কাঁধে হাত রেখে
কান্নার কারণ জানতে চাচ্ছিলেন।প্রশ্ন শুনে এক ঝটকায়
উঠে দাঁড়ালেন।তার চোখে রাগ নাকি ভয় বুঝতে
পারছিলাম না।কিন্তু সেটা মূহুর্তের জন্যই।তারপরই ফিক
করে হেসে দিলেন তিনি।জড়তাহীন কণ্ঠে জবাব দিলেন,
--নাবিলা বড়ভাবির বাবার বাড়িতে,হটাৎ এই প্রশ্ন কেন?
তাছাড়া তুমি নাবিলার কথা জানলেই বা কি করে?
জেনেছ বেশ ভাল!এটা নিয়ে কাঁদার কি অাছে শুনি?ভয়
হচ্ছে?অামাকে হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছে?হাহাহা!
ভালবেসে ফেলেছ অামাকে?এক রাতেই?হোহোহো!সব
বাদ দাও,খিদা লেগেছে?কিছু খাবে?অাচ্ছা,পরে খেও।
জানো অাজ কি হয়েছে,অামার ছাত্র এসেছিল
ওয়ালিমায়........
উনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে অন্য কথা বলছেন।এদিকে অামি
তড়পাচ্ছি!উনি কি লুকাচ্ছেন অামার থেকে?উনাকে তো
বেশ দ্বীনদার ই মনে হচ্ছিলো সকাল থেকে।তাহলে কি
সবই নাটক?ভণ্ডামী!!
ইনশাআল্লাহ চলবে........
"শায়খ"
পর্ব চার.........
উনি যত অামার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন,অামার মনে
সন্দেহ তত ভীড় করছিলো।এশার পর তিনি অাবারও
অামার কোলে মাথা রেখে কুরঅান তিলাওয়াত
করেছেন.........
'ওয়াত্বুর....
ওয়া কিতাবিম মাস্তুর.....
ফি রক্কিম মানসুর......
....................
..................
ইন্না অাজাবা রব্বিকা লাওয়াক্বিউ.......
.......................
.......................
ইয়াওমা ইয়ুদা'উনা ইলা নারি জাহান্নামা দা'অা.........
.....................
.....................
ওয়া মিনাল্লাইলি ফাসাব্বিহ হু ওয়া ইদ বারন নুজুম!'
অামি খেয়াল করলাম তিনি সূরাটা তিলাওয়াত করার
সময় কিছুকিছু জায়গায় এসে কেঁদে ফেলছিলেন।অবাক
লাগলেও অামলে নিই নি।অামি নিশ্চুপ মুর্তির মতন বসে
ছিলাম।গতকাল কোলে মাথা রেখে কুরঅান
তিলাওয়াতের এই ঘটনা অামায় যতটা অান্দোলিত
করেছিল,অাজ তার সিঁকি ভাগও করছেনা।বোধ হয়
অামার মূর্তরূপ দেখে তিনি বলা শুরু করেছেন,
--অামিনা!তোমায় হতাশ দেখাচ্ছে কেন?
--কই নাতো.....
--অবশ্য এই সূরাটা পড়লে হতাশ হওয়ারই কথা।ভয় করছে
তোমার,তাইনা?
--না তো!কেন ভয় করবে?তাছাড়া এই সূরার বাংলা অর্থ
কখনও পড়িনি,তাই.......
অাসলে অামি........
--ঠিকাছে সমস্যা নেই।পড়োনি তো এখন পড়বে।রোজ
একটা সূরার কমপক্ষে বিশ অায়াত অর্থ অার তাফসীর সহ
পড়বে কেমন?
--ইনশাআল্লাহ পড়বো।
--এখন শুনো,এই সূরাটা বুঝিয়ে দিই তোমাকে।এই সূরাতে
প্রথমে তূর পাহাড়ের শপথ নেওয়া হয়েছে।তূর পাহাড়
কোনটা জানো?মূসা অালাইহিস সালাম যেই পর্বতে
দাঁড়িয়ে তোমার অামার রব্বের সাথে কথা বলতেন,সেই
পাহাড়ের নাম।তারপর শুনো তারপর কিতাবের
নামে,বায়তুল মামুরের নামে কসম করা হয়েছে।বলোতো
বায়তুল মামুর কি?
--নিশ্চিত না,তবে একটা অার্টিকেলে
পড়েছিলাম,বাইতুল মা‘মুর হলো সপ্ত আকাশের ওপর
অবস্থিত সে ইবাদতখানা যেখানে ফেরেশতারা ইবাদত
করেন। এ ইবাদতখানা ফেরেশতাগণের দ্বারা এমনভাবে
পরিপূর্ণ হয়ে থাকে যে, প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার করে
ফেরেশতা ইবাদতের জন্য প্রবেশ করেন। যাদের কিয়ামত
পর্যন্ত পুনরায় প্রবেশের পালা আসবে না।
--মাশাঅাল্লাহ!সঠিক বলেছ।অাসলে সপ্তম আসমানে
বসবাসকারী ফেরেশতাদের কা'বা হচ্ছে বায়তুল মামুর। এ
কারণেই মেরাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে পৌঁছে ইবরাহীম
আলাইহিস সালাম-কে বায়তুল মামুরের প্রাচীরে হেলান
দিয়ে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখতে পান।কেননা দুনিয়ার
কাবা তো তিনিই নির্মান করেছেন।
তারপর শুনো,তোমার অামার রব্ব কসম করেছেন অাকাশের
অার সমুদ্রের নামেও।এখন তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে
পারে,অাল্লাহ যা বলবেন,তা তো সত্যিই বলবেন।তাহলে
এতবার এতকিছু নিয়ে কসম কাটছেন কেন,তাইনা?
--হু,তা ঠিক।বারবার কসম কাটার কি প্রয়োজন ছিল?
--অামরা কেন কসম করি বলোতো?বিশ্বাসযোগ্যতা
বাড়াতে,তাইনা?কেউ অামাদের কথা বিশ্বাস না
করলেই অামরা শপথ করে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াই।কিন্তু
তোমার অামার রব্বের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়।
খেয়াল করলে দেখবে,তিনি তখনই কসম করেছেন,যখন খুব
খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলেছেন।পাশাপাশি কুরআন মাজীদে
বিভিন্ন স্থানে যে বিভিন্ন কসম করা হয়েছে তার
উদ্দেশ্য কথাকে সৌন্দর্যমন্ডীত, অলংকারপূর্ণ ও বলিষ্ঠ
করে তোলা,বুঝলে?
--হ্যাঁ,বুঝলাম।
--দেখ এই সূরার মূল বিষয় কি!কিয়ামতের বর্ণনা,জাহান্না
মের শাস্তি,জান্নাতের প্রাচূর্য্য,এবং অামাদের
দায়িত্ব।বুঝলে না তো?
খেয়াল করলে দেখবে এর ছয় থেকে ষোল নং অায়াতে
কেবলমাত্র কিয়ামতের ভয়াবহতা অার জাহান্নামীর
শাস্তির কথা বলা অাছে।তারপর পরই দেখ, সতের থেকে
অাটাশ নং অায়াত পর্যন্ত বলা অাছে জান্নাতের বিবরণ
সম্পর্কে।
--জান্নাতের বিবরণ?!!কি কি বিবরণ!!
--এটাই যে,ওখানে থাকবে প্রাচুর্যতা।অার
......
উঁহু বলবনা।এটা তুমি পড়ে নিবে।তারপর রব্বে কারীম
অবিশ্বাসীদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন,স্রস্ট
া সম্পর্কে,সৃষ্টি সম্পর্কে,তাদের কর্ম সম্পর্কে।অার
তারপরই অাল্লাহ তাঅালা অামাদের কর্ম,অামাদের
দায়িত্ব সম্পর্কে অালোকপাত করেছেন।কি কি দায়িত্ব
জানো......?!
--না,অাপনি বলুন।
--"ওয়াছবির লিহুকমি রব্বিকা ফা ইন্নাকা বিঅা'ইউনিনা
ওয়া সাব্বিহ বিহামদি রব্বিকা হিনা তাকুম"
এটা শেষ অায়াতের অাগের অায়াত।এটাতে বলা অাছে
অামাদেরকে ধৈর্যধারণ করতে,তারপরই বলা হয়েছে
রব্বের তাসবীহ পাঠ করতে।
তারপরের অায়াত দেখ,ওটাতে বলা অাছে,
"ওয়া মিনাল্লাইলি ফাসাব্বিহ হু ওয়া ইদ বারন নুজুম"
এখানে অাদেশ অাছে রাতের বেলা,শেষ রাতে অার
নক্ষত্র অস্ত যাওয়ার পর রব্বের তাসবীহ পাঠ করার,রব্বের
মহীমা ঘোষণা করার।যদিও এটা রসূলুল্লাহর প্রতি উপদেশ
ছিলো,তথাপি এটা অামাদের জন্যও প্রযোজ্য।এই
অামিনা,দরুদ পড়বে না?পড়ো সল্লাল্লহু অালাইহি ওয়া
সাল্লাম।রসূলুল্
লাহর নাম নিলে দরূদ পড়া লাগে তো।গতকালও দেখলাম
তুমি অামায় মনে করিয়ে দাওনি।
--অাফওয়ান!অামার মনে ছিল না।সল্লাল্লহু অালাইহি
ওয়া সাল্লাম।কিন্তু,মানে টা বুঝলাম না!এখানে কি
তাহাজ্জুদের কথা বলা হয়েছে।
--শুধু তাহাজ্জুদ না,বরং মাগরীব,ইশা এদুটোও এই রাতের
ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত,
সাধারণ তাসবীহ পাঠ এবং আল্লাহর যিকরও বুঝানো
হয়েছে।
--অার নক্ষত্র অস্ত যাওয়ার পর মানে?কোন সময়?কিসের
ইবাদত?
--এটা সম্ভবত ফজরের স্বলাতের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নত
স্বলাতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
অামি মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে অাছি।এই লোকটা
এত জানে কিভাবে?মাশাঅাল্
লাহ!!মাশাঅাল্লাহ!!
কিছুক্ষণের জন্য অামার মনেই ছিলোনা,'নাবিলা' অার
'নপুংসক' শব্দ দুইটার কথা।মনে পড়লো,যখন তিনি অামাকে
কাছে টেনে নিলেন।অামি প্রবল অস্বস্তিতে ভুগছিলাম।
একদিকে 'নাবিলা' রহস্য জানার অাগে অামি তাকে
এক্সেপ্ট করতে পারছিলাম না।অন্যদিকে তাকে বাধাও
দিতে পারছিলাম না,কেননা তিনি অামার উপর অসন্তুষ্ট
হয়ে রাত্রীযাপন করলে অামি গুনাহগার হব।তবুও অস্পষ্ট
কণ্ঠে বললাম,
--অাই থিংক অাই নিড সাম টাইম....
--এন্ড সাম স্পেস অলসো,রাইট?
তার কথার ধরণ দেখে অামি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম।
কি অবলীলায়,জড়তাহীন কণ্ঠে কথাটা বলেছেন।যেন
তিনি অাগে থেকেই জানতেন অামি এমন কিছু বলব।অার
মুখে কি প্রশস্ত হাসি!!একদম পবিত্র একটা হাসি।নাহ!এই
মানুষটা অার যাই হোক,অামাকে ঠকাতে পারেন না।
কিংবা এমন কিছু করতে পারেন না,যা অামায় কষ্ট
দিবে।অামার হক্ব নষ্ট করবে।অামি তবুও সাহস করে
অাবার নাবিলার প্রসঙ্গ তুললাম।জানতে চাইলাম কে এই
নাবিলা।তার খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর ছিলো,
--তুমি এখনও এসব নিয়ে পরে অাছ?অাচ্ছা পাগলী তো
তুমি।অবশ্য এমন পাগলি ই অামার পছন্দ।এই অামিনা,এসো
শুয়ে পরি।অার তোমায় একটা গল্প শোনাই।গীরাহ বোধের
গল্প।
একবার কি হয়েছে শুনো,অাম্মাজান অায়শার ঘরে
রসূলুল্লাহ অার তার সাহাবারা খেতে বসেছেন।এমন সময়
উম্মে সালামাহ অাম্মাজান তার রান্না করা খাদ্যে
পূর্ণ প্লেট পাঠালেন,তখন কি হয়েছে শুনো,অাম্মাজান
অায়শা খুব ঈর্ষাকাতর হয়ে ওই প্লেটটাকে এক বাড়িতে
ভেঙে ফেললেন।হাহা!কি বাচ্চামো তাইনা?এটাও কিন্তু
এক প্রকার গীরাহ বোধ।অাচ্ছা তুমি জানো গীরাহ মানে
কি?গীরাহ হলো একধরণের ঈর্ষা,প্রোটেক্টিভ
জেলাসি..........
অামি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।তিনি অামার একহাত ধরে
শুয়ে অাছে।অার অামি উনাকে মেনে নিতে পারছিনা।
নাবিলা রহস্য না জানা অবধি অামার শান্তি মিলবেনা
হয়তো।মানুষটা মাসনুন অামল করা শুরু করেছেন।অামায়
মুখে মুখে অায়াতুল কুরসী,তিনকুল,সূরা বাকারার ২৮৫-২৮৬
অায়াত পড়াচ্ছেন।অামি পলকবিহীন চোখে তাকিয়ে
অাছি তার দিকে।এই মানুষটাকে এত স্বচ্ছ, এত পবিত্র
মনে হয়,তাহলে তিনি নাবিলা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছেন
কেন বারবার!!
ইনশাআল্লাহ চলবে.......
"শায়খ"
পর্ব পাঁচ........
সারাটা রাত অামার কতটা অস্বস্তিতে
কাটছিল,বোঝানো সম্ভব নয়।মাথায় হাজারো চিন্তা জট
পাকিয়ে যাচ্ছিল।শেষে অার সহ্য করতে না পেরে উঠে
সাজদায় পরে গেলাম।যত অভিযোগ,সন্দেহ ছিল,সব
রব্বকে জানিয়ে উপায় খুঁজছিলাম।স্বলাত শেষে সূরা
ইনশিরাহ পড়লাম অনেকক্ষণ ধরে।স্বস্তি না মিললেও বুক
থেকে ভারী বোঝা নেমে গেছে,এটা অন্তত বুঝেছি।
পানি খাওয়ার জন্য টেবিলের কাছে অাসতেই দেখি
শায়খের ফোন!ধরবোনা ধরবোনা করেও ফোনটা হাতের
মুঠোয় পুরে নিলাম।কোনও পাসওয়ার্ড,পিন,লক না থাকায়
ফোনলক খুলতে অামায় বেগ পেতে হয়নি।গ্যালারি,ই
নবক্স,কললিষ্ট,ফেসবুক,ম্যাসেঞ্জ
ার,ইমো,হোয়াটসঅাপ...........
কোনও কিছুই চেক করা বাকি রাখিনি। কিচ্ছু নেই!
বিশ্বাস করুন,একদম কিচ্ছু নেই।উনাকে সন্দেহ করার মতন
একদমই কিচ্ছু পাইনি ফোনে।হতাশ হয়ে ফোনটা রেখে
দেওয়া মাত্রই অাবার বিদ্যুৎ গতিতে ফোনটা হাতে
নিলাম।সব চেক করেছি,কিন্তু কন্টাক্ট লিস্ট তো চেক
করিনি!! কাঁপা কাঁপা হাতে কন্টাক্ট লিস্টে ক্লিক
করলাম।সবগুলো সেভ করা নাম্বার দেখছিলাম।হটাৎ
চোখ অাটকে গেলো,একটা নাম্বারে......
'দুহার অাম্মু' দিয়ে সেভ করা নাম্বার টা।দুহা কে অামি
জানিনা।দুহার অাম্মু কে তাও জানিনা।কিন্তু এখনই যদি
জানতে না পারি,তাহলে এই সন্দেহটা অামায় কুঁড়ে কুঁড়ে
খাবে।রুম থেকে বেরিয়ে এসে ওই নাম্বারে ডায়াল
করলাম।একবার...দ
ুইবার...তিনবার......
বেশ কয়েকবার ডায়াল করার পর,অনেকটা ঘুমে জড়ানো
কিন্তু উত্তেজিত নারী কণ্ঠ ওপাশ থেকে কোনও সূচনা
ছাড়াই বলে উঠলো.......
'বাহ!বাহ!মোল্লা সাহেবের তাহলে মনে পড়েছে
অামাকে.....
অামি জানতাম,যতই মোল্লাগিরি দেখাও,তুমি অামায়
ছাড়া অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে
পারবেনা।তো মোল্লাসাহেবের কি খবর?কালকের
রাতটা কেমন কাটলো?'
একেকটা কথা অামায় তীরের মতন বিদ্ধ করছিল।কিছু
বলার বা শোনার সাহস হয়নি অামার অার।লাইনটা কেটে
দিয়ে ফোনটা অাবার অাগের জায়গায় রেখে দিলাম।
কোনওমতে টলতে টলতে জায়নামাজে ফিরে এসেছি
অামি।বিয়ের দ্বিতীয় দিনেই যদি কোনও মেয়েকে
জানতে হয়,তার স্বামীর প্রতি অন্য একটা মেয়ের এমন
উক্তি,তাহলে ওই মেয়েটার হালত কেমন হওয়া উচিত!!
অামার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছিল।দাঁতে
দাঁত চেপে কান্না চাপার অপ্রতিরোধ্য চেষ্টা করা
সত্ত্বেও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম।অামার
গোঙানিতে,নাকি উনার অভ্যাসবশত বলতে
পারিনা,হটাৎই উনার ঘুম ভেঙে গেল।খুব শব্দ করে পড়ে
উঠলেন,
"অালহামদুলিল্লা হিল্লাযি অাহ ইয়ানা বা'দামা
অামাতানা,ওয়া ইলাইহিন নুশুর"
বিছানা থেকে উঠে অামার কাছে এসে,সালাম দিয়ে
কয়েকবার কান্নার কারণ জানতে চাইলেন।অামার
অবস্থা এমন ছিলো যে,তাকে দেখামাত্র কান্নার বেগ
অারও বেড়ে যাচ্ছিল।তিনি অামাকে যতবার স্পর্শ
করছিলেন,অামি ততবার তাকে সরিয়ে দিচ্ছিলাম।
অাসলে অামার তার প্রতি এই দুইদিনে যত শ্রদ্ধা
জেগেছিল,সব এখন ঘেন্না অার বিদ্রুপে পরিণত হয়ে
গেছে।তাকেও অন্য পাঁচজন লেবাসধারী মুসলিমের মতনই
মনে হচ্ছে,যারা মুমিন হওয়ার নাটক করে।রাগে,ঘেন্নায়
উনার পাশ থেকে উঠে পরি।উযু করে এসে অাবারও
স্বলাতে দাঁড়াই,সাজদায় গিয়ে অামি অাগে কখনও
বাংলায় দুঅা করিনি,কিন্তু সেদিন করেছিলাম।খুব করে
অাল্লাহকে বলেছিলাম অামার দুঃখের ভার কমিয়ে
দিতে,অামায় পথ দেখাতে।
সাজদাহ থেকে যখন উঠেছিলাম,অামার মনে হচ্ছিল,সব
কষ্ট শেষ।কান্না অাটকে রাখলে গলায় যে চাপা
ব্যাথাটা হয়,সেটা অার নেই,অশ্রুও অার গড়াচ্ছে
না,একদম হালকা লাগছে নিজেকে।সালাম ফিরিয়ে
অামি পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।উনি
অামার জায়নামাজের পাশেই বসে ছিলেন।অামাকে
উনার দিকে তাকাতে দেখে অাবারও এগিয়ে এলেন।বলা
শুরু করলেন,
--তোমার অাসলে কি হয়েছে বলো তো?এমনভাবে
কাঁদছো কেন তুমি?তুমি কাঁদলে অামার খারাপ লাগে।কি
হয়েছে বলো?বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে?অামি
কোনওভাবে তোমায় কষ্ট দিয়েছি?অামার পরিবার
তোমাকে অাপন করে নিচ্ছেনা বলে কষ্ট পাচ্ছ?ও
অামিনা!চুপ কেন তুমি? কিছু তো বলো!প্লিজ......
কিছু একটা বলো!
অামি স্থির কণ্ঠে বললাম,
"দুহার অাম্মু ই কি নাবিলা?"
এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। অামায়
স্পর্শ করতে গিয়েও করেন নি অার।বিস্ফারিত চোখে
তাকিয়ে ছিলেন।উনার এই কিংকর্তব্য বিমূঢ় অবস্থা
দেখে অামি অাবারও প্রশ্ন করলাম....
--অাহলিয়া হিসেবে কি অামি অাপনার কাছ থেকে এই
প্রশ্নের উত্তর জানতে পারিনা?অাপনি অামার
অলঙ্কার,ঠিক একই ভাবে অামিও তো অাপনার অলঙ্কার।
তাহলে অাপনার অামার মাঝে রাখঢাক কেন থাকবে?কি
লুকাচ্ছেন অাপনি অামার থেকে?
প্রশ্ন গুলো করার সাথে সাথেই তিনি ডুকরে কেঁদে
উঠলেন।অামার কাছে খুব কাকুতিভরা কণ্ঠে জানতে
চাইলেন,
--এসব না জানলে কি হয়না অামিনা?
--সবটুকু না জানলে অামি স্বস্তি পাচ্ছিনা জনাব।
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলাম।
--অামিনা!ও অামিনা!তুমি কি জানো না,পাপ প্রকাশ
করা গুনাহ?অামি এমনিতেই অনেক গুনাহগার,পাপ প্রকাশ
করতে বাধ্য করে অামার গুনাহ অার নাইবা বাড়ালে.....
--অামি কিচ্ছু জানিনা,জানতে চাইওনা।অামি শুধু
নাবিলা অার দুহার অাম্মুর ব্যাপারে জানতে চাচ্ছি।
তিনি কিছুটা শান্ত হয়ে অামার কাছ থেকে জানতে
চাইলেন অামি দুহার অাম্মু,অার নাবিলার কথা কার কাছ
থেকে জানতে পেরেছি।
অামি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জায়গা থেকে উঠে টেবিলের
উপর থেকে তাকে তার ফোনটা এনে দিলাম।হাঁটার সময়
খেয়াল করলাম অামি এখন অার টলছি না।কষ্টের অনুভূতি
ও কমে গেছে।এতক্ষণ যে উত্তাল সমুদ্র বহমান ছিল
অামার মাঝে,তা এখন একেবারেই শান্ত হয়ে গেছে।
অামি ফোন এনে উনার হাতে দিতেই দেখতে
পেলাম,প্রায় ত্রিশটি মিসড কল,সবগুলোই দুহার অাম্মু
দিয়েছে।এটুকু দেখেই তিনি একপ্রকার অার্তনাদ করে
বললেন,
--এ কি করেছ অামিনা!এ কি করলে তুমি!!তুমি কি
জানোনা, কারও দোষ ত্রুটি অনুসন্ধান নিয়ে কতবার
নিষেধাজ্ঞা এসেছে?তুমি জানোনা,সূরা হুজুরাতে স্পষ্ট
বলা হয়েছে,কারও গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করতে?তবুও
তুমি এটা কেন করলে?
--অামি জানিনা এত কিছু।অাপনি অাগে অামার প্রশ্নের
উত্তর দিন।
--তুমি কি জানোনা,বিয়ের অাগে কৃত গুনাহ, বিয়ের পর
প্রকাশ করা উচিৎ নয়।অামিনা!কেন জেদ করছো?যা কিছু
কল্যানকর নয়,তা তুমি নাইবা জানলে....
--অামি না জানলে শান্তি পাবনা জনাব।সন্দেহ খুব
খারাপ,খুবই ভয়ানক!
--বেশ!তাহলে শুনো,নাবিলা ছিল অামার ব্যভিচারের
সঙ্গী।অাঠার বছর বয়স থেকে একুশ বছর বয়স পর্যন্ত অামি
শায়ত্বানের ধোঁকায় তার সাথে ব্যভিচারে মগ্ন ছিলাম।
যিনাহয় মগ্ন ছিলাম।
অামিনা!যখন অামি হিদায়াত পেলাম,বুঝতে
পারলাম,এটা কত বড় গুনাহ,অামি বারবার তাকে বিয়ে
করতে চেয়েছি।অামি জানিনা কেন,কোন কারণে সে
অার অামায় বিয়ে করতে রাজি ছিলনা।তবে অামি
চেয়েছিলাম তাকে বিয়ে করতে,পাপ হতে মুক্তি পেতে।
--যিনাহয় মত্ত ছিলেন মানে!অাপনাদের কি শারীরিক......
--না অামিনা,না!
অামার মুখের কথা টেনে নিয়েই বললেন তিনি।
তুমি জানোনা অামিনা,অামি তার কাছে অক্ষম একটা
মানুষ।তার হাত ধরা ব্যতিত তার অার কাছে যাইনি বলে
সে অামায় প্রচুর অবজ্ঞা করতো,নপুংসক বলতেও দ্বীধা
করতো না।কিন্তু অামি অামার চিন্তায় অটল থাকতাম।
যিনাহয় মত্ত থাকার মানে কেবলমাত্র শারীরিক
বোঝাপড়া হয়ে যাওয়া,তা তোমায় কে বললো?তুমি কি
চোখের যিনাহ,হাতের যিনাহ,পায়ের যিনাহ,জিহ্বার
যিনাহ সম্পর্কে ভুলে যাচ্ছ?যেখানে অাকৃষ্ট হওয়ার
অাশংকা থাকলে ওযর ছাড়া গায়রে মাহরামের সাথে
কথা বলা ই জায়েজ না,সেখানে একজনের সাথে অামি
'প্রেম' নামক হারাম সম্পর্কে মগ্ন!এটা কি যিনাহ নয়
অামিনা?লজ্জাস্থান তো কেবলমাত্র যিনাহকে
পরিপূর্ণতা দেয় অামিনা!!হারাম কিছুতে
দৃষ্টিপাত,কথাবা
র্তা,কাজকর্ম সবই হারাম।
--অাপনি এত ধার্মিক হয়েও এসবে জড়ালেন কিভাবে!?!
--বিশ্বাস করো অামিনা,অামি তখন নামমাত্র মুসলিম
ছিলাম।অামার পরিবারের দিকে তাকালেই তুমি বুঝতে
পারবে।অামি শুধু জানতাম,বিয়ের অাগের প্রেমে
অশ্লীলতা না থাকলে তা জায়েজ।অামি জানতাম
কেবলমাত্র ফিজিক্যাল রিলেশনশীপই যিনাহ।বাদবাকি
হাত ধরা,চুমু,কিংবা জড়িয়ে ধরা যা কিছুই হোক না
কেন,তা জায়েজ।অামি জানতাম,কথা বার্তা
হয়না,দেখা হয়না,তবুও দূর থেকে ভালবাসলে তা জায়েজ।
এটাও যে মনের যিনাহ,তা অামি জানতাম না
অাহলিয়া......
--অার দুহার অাম্মু?সে কে?
--অামার স্বপ্ন ছিলো অামাদের মেয়ের নাম দুহা হবে।
সেইজন্যই নাবিলার নাম দুহার অাম্মু দিয়ে সেভ
করেছিলাম।
--বুঝলাম।
--অামিনা!বিশ্বাস করো অামিনা!
অামি জানতাম না যিনাহর শাস্তি এত ভয়াবহ
যে,অবিবাহিত যুবক যুবতী ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তার
ইহকালীন শাস্তি হিসেবে দুজনকেই ১০০ বেত্রাঘাত
করতে হবে এবং সাথে একবছরের জন্য বহিষ্কার হতে
পারে সমাজ হতে।অামি জানতাম না,ব্যভিচারীদের
সাথে অাল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না,অামি
জানতাম না,ব্যভিচারীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার
মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর
নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত
থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে
মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি
অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে
যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের
সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে.........
অামি খুবই লজ্জিত অামার এই পাপের জন্য,অামি সবসময়
অাল্লাহর কাছ থেকে এই গুনাহ থেকে মাফ চাই
অামিনা.....
এখনও চাই।অামিনা,এটা তো তোমার হক্ব ছিলো,যা
যিনাহর দ্বারা অামি নষ্ট করেছি।এই অামিনা!তুমি
অামায় মাফ করবে তো?অামিনা!!চুপ করে থেকো না।
অন্তত একটা অাশার বাণী শোনাও।
মানুষটা কাঁদছেন।উনার চাপা কান্না অামার হৃদয়ে
অন্তঃদহন ঘটাচ্ছে।অামি ধীরে ধীরে তার কাঁধে হাত
রেখে বললাম,
--চলুন,তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়ে অাসছে।তাহাজ্জুদ
পড়বেন চলুন।
--অামার উপর এখনও রাগ করে অাছ তুমি?অামায় মাফ
করবে না?
--তাওবাহ করলে তো স্বয়ং অাল্লাহই মাফ করবেন।
অামার রব্ব যখন তাওবাকারীকে মাফ করে দেন,তখন তার
বান্দা হয়ে তাওবাকারীর উপর ক্ষোভ রাখার মতন এতটাও
দুঃসাহস অামার নেই শায়খ!!
প্রথমবারের মতন তাকে অামি শায়খ বলে ডাকলাম।
অামার ডাক শুনে,নাকি অামার উত্তর শুনে জানিনা,উনি
অামায় বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন।
কাঁদছেন উনি,কাঁদছি অামিও.........
কিসের কান্না কে জানে...............
হটাৎ ফিসফিসিয়ে উনি অামায় বলে উঠলেন,
--সো মাই ডিয়ার অাহলিয়া,ডু ইউ নিড মোর টাইম?
--নো ডিয়ার,নিদার টাইম,নর স্পেস............
লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে উত্তর দিলাম।মাত্র দুদিনের
সম্পর্কে এতটা সহজ হয়ে কিভাবে তার সাথে কথা
বলছিলাম কে জানে।খুব প্রশান্তি লাগছিলো।মুখ ফুটে
অজান্তেই বের হয়ে এলো,
অালহামদুলিল্লাহ..............!!
ইনশাআল্লাহ চলবে.........
"শায়খ"
পর্ব ছয়.....
ফজরের পর তার মুখে মুখে অার রহমান পড়লাম।
--অার রহমান......
অাল্লামাল ক্বুরঅান....
খলাক্বল ইনসান.......
অাল্লামাহুল বায়ান........
...................................
...................................
...................................
রব্বুল মাশরি ক্বয়নি ওয়া রব্বু্ল মাগরিবাইন........
ফাবি অাইয়্যি অালা ই রব্বি কুমা তুকাজ্জিবান.......
...............................
...............................
ফা ইজান সাক্ক্বতিস সামাউ ফাকানাতান ওয়ার দাতান
কাদ্দিহান.........
...............................
................................
হাজিহি জাহান্নামুল লাতি ইউকাযযিবু বিহাল
মুজরিমুন.......
.............................
ওয়া লিমান খফা মাক্বমা রব্বিহি জান্নাতান...........
..............................
..............................
তাবারকাসমু রব্বিকা যিল যালালি ওয়াল ইকরম.........
...............................
..............................
--অামিনা!এই সূরাটা খুব সুন্দর না?মুখস্থ করতে কি খুব
বেশী সময় লাগবে তোমার?
--না,কারণ এখানে একই অায়াত কয়েকবার অাছে।
--হ্যাঁ,পাশাপাশি অারও একটা কারণ অাছে।এই সূরাটার
অর্থ এতই মনকাড়া যে তুমি একবার পড়লেই মনে থাকবে
ইনশাআল্লাহ!অর্থটা তুমি পড়ে নিও,অামি হালকা ধারণা
দিই কেমন?
দেখো এই সূরার প্রথম অায়তটা কিন্তু তোমার অামার
রব্বের নাম দিয়ে শুরু হয়েছে,তাইনা?এই নামের মাহাত্ম্য
বলে প্রকাশ করা যাবেনা।এই,তুমি রহমান অর্থ জানো?
--হ্যাঁ,পরম করুণাময়।
--কারেক্ট!এই সূরার মজা এটা ই.....
দেখো সূরার প্রথমে রব্বের একটা বিশেষণ এর কথা
উল্লেখ অাছে,যে তিনি পরম করুণাময়।তারপরই তার করুণা
সম্পর্কে উদাহরণ দিয়েছেন তিনি।
--যেমন?
--এইযে কুরঅানের সৃষ্টি,মাখলুকাতের সৃষ্টি,ভাষা
শিক্ষা দেওয়া,প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা অর্থাৎ এইযে
চাঁদ সূর্য নিজের কক্ষপথে বিরাজমান,মানুষ অার জিনকে
সৃষ্টির উপমা,সমুদ্রের প্রবাহ,মনিমুক্তা সৃষ্টি,সমুদ্রের
জাহাজ,দুনিয়ার সব কিছু.......
সবকিছু তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন তাইনা?এসবই উল্লেখ
করেছেন।
--তারপর?
--তারপর শুনোনা,তোমাকে অামাকে তিনি হিসাব
নিকাশের রিমাইন্ডার দিয়েছেন।রিমাইন্ডার দিয়েছেন
কিয়ামতের..........
জানো,সেদিন অপরাধীকে কিভাবে চেনা যাবে?
--কিভাবে?
--চিহ্নের সাহায্যে।এখানে অাবার জান্নাত
জাহান্নামের বর্ণনা দেওয়া অাছে।যেমন জাহান্নামের
ফুটন্ত পানি,জান্নাতের ঝর্ণাধারা,বাগান
,ফলগাছ,হীরা,প্রবাল,ফলমুল,ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট হুর........
--হুর?!
--হু,ডাগর চক্ষু বিশিষ্টা হুর!যাদেরকে এর অাগে কেউ
কখনও স্পর্শ করেনি।অার তারা......
--অাপনি জান্নাতে গেলে অাপনাকেও কি হুর দেওয়া
হবে?
--কেন শুনি?গীরাহ বোধ নাকি?
--অামি পড়েছিলাম,একজন জান্নাতি পুরুষকে বাহাত্তর
টা করে হুর দেওয়া হবে।অাপনি জান্নাতে গেলে
অাপনাকেও দেওয়া হবে,তাইনা?তখন কি অাপনি হুর
নিবেন?
--বাহাত্তর টা হুর!!!এই কথা তোমাকে কে বলেছে শুনি!!
কুরআন বা কোন সহীহ হাদীসের কোথাও লেখা নেই যে
প্রতিটি পুরুষ জান্নাতে বাহাত্তর টি হুর পাবে ৷বরং
যেসকল পুরুষ প্রথম বেহেস্তে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন
করবে, তাদের ব্যাপারে রাসূল সাঃ বলেছেন, যে দলটি
সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই দলের মানুষদের
আকৃতি হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তারা
সেখানে থুথু ফেলবে না, নাকের শিকনিও বের হবে না,
প্রস্ৰাব-পায়খানাও করবে না। তাদের ব্যবহার্য পাত্রসমূহ
হবে স্বর্ণের তৈরি আর সোনা-রুপার সংমিশ্রণে তৈরি
হবে চিরুনি। চন্দন কাঠ ও আগরবাতি জ্বালানো থাকবে।
তাদের শরীরের ঘাম হবে মিশকের মতো সুগন্ধময়। তাদের
প্রত্যেকের জন্য দুজন করে স্ত্রী (হুর) থাকবে। সৌন্দর্যের
কারণে গোশতের ভিতর দিয়ে তাদের পায়ের হাড়ের
মজ্জা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হবে। তাদের মধ্যে না থাকবে
ঝগড়া-বিবাদ, আর না থাকবে হিংসা-বিদ্বেষ। তাদের
সকলের অন্তর যেন একটি অন্তরে পরিণত হবে। সকাল-
বিকাল তারা আল্লাহ তা'আলার পবিত্রতা বর্ণনা করবে।
--তাহলে যে অামি এতদিন পড়লাম.......!
--ভুল পড়েছ হয়ত।এটা সহীহ বুখারী,অার মুসলিম দুইটাতেই
অাছে।
--অাচ্ছা,দুইটা দিলে দুইটা হুর কি নিবেন?
--অামার ঈমান,অামল খুবই দূর্বল অামিনা,অামি এসব
নিয়ে ভাবিনা।
--শুনুন,হুর নিলে কিন্তু অামাকে পাবেন না।
--পাব না মানে?
হতবাক হয়ে বললেন উনি।
পাবনা কেন?জান্নাতে গেলে তুমিই তো অামার স্ত্রী
হবে।
--তবুও,অামি সতীন মানতে পারবনা।
মন খারাপ করে বললাম......!
অামার কথার ঢংয়ে তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন।
--ও অামিনা!তুমি জানো,জান্নাতি নারীর তূলনায় হুর
কিছুই না।জান্নাতি নারীর সৌন্দর্য,সম্মান হুরের থেকে
অনেক বেশী।
--হোক বেশী,লাগবেনা হুর।অামি সাবধান করে
দিচ্ছি,অাপনি কিন্তু একটা হুরও নিবেন না।
--তুমি অামায় জান্নাতি সার্টিফিকেট দিয়ে ফেলছো
অামিনা।
হতাশার স্বরে বললেন তিনি।
জানো অান নাজমে কি বলা হয়েছে,
'ফালা তুজাক্কু অানফুসাকুম,হুয়া অা'লামু বিমানিত
তাক্ব....'
--অর্থাৎ?
--অর্থাৎ তোমরা নিজেদেরকে খুব পবিত্র মনে করো না।
কে তাক্বওয়া অবলম্বন করে তা তিনি ভালভাবেই
জানেন।
--অাস্তাগফিরুল্ল--অাস্তাগফিরুল্লাহ,বুঝলাম এখন।
--অামিনা!তুমি শুদ্ধভাবে কুরঅান পড়তে পারো?অাজ
দেখলাম জিম,যাল,যা এ একই উচ্চারণ করলে,উচ্চারণ তো
একই না।
--না,অাসলে.......
মানে.....
--বুঝেছি,বলতে হবেনা।মাত্র ছয়টা বাজে,এসো,খাতা
কলম নিয়ে বসি।অাজ অামরা তাজউইদ নিয়ে পড়ব
ইনশাআল্লাহ।
--এখন?!মানে....
এখন তো সকাল হয়ে গেছে।বাসায় কাজ করতে হবে না?
--হ্যাঁ,ভাল কথা মনে করেছ।শুনো অামিনা,তোমায় কিছু
টিপ্স দিই।প্রথমেই নিয়ত করে ফেলো,যা কিছুই হোক না
কেন,মায়ের মন জয় করবে ই।তারপর শুনো..............
তিনি একের পর এক উপায় বলে দিচ্ছেন,কিভাবে এগোতে
হবে।অামি মুগ্ধতার সাথে মুচকি হাসছি।সব শায়খই যদি
অাহলিয়াকে এভাবে সহযোগীতা করে,তাহলে জীবনটা
কোথাও গিয়ে অাটকে থাকার কথা না।
চলবে ইনশাআল্লাহ.....
"শায়খ"
পর্ব সাত.....
শাশুড়ির মন জেতার যথেষ্ট টিপস দেওয়ার পর শায়খ ঝাড়ু
নিয়ে ঘর ঝাড়ু দিতে গেলেন।অামার তো চক্ষুচড়ক
অবস্থা!!তিনি নাকি ঘর ঝাড়ু দিবেন!!এটা তো অামার
কাজ!!!!অামি তার হাত থেকে ঝাড়ু নিতে গেলেই তিনি
চওড়া হাসি দিয়ে বললেন,
"ঘরের কাজে অাহলিয়াকে সাহায্য করা সুন্নাহ তো।তুমি
এক কাজ করো,দেখো তো তাকে ডিম থাকার কথা,ডিম
অাছে কিনা।অার দেখো চালের গুড়া অাছে কিনা,কাঁচা
মরিচও
অাছে মনে হয়।তুমি বরং এক কাজ করো,নাস্তা বানানোর
মতন কি কি অাছে দেখ।অামি অাসছি"
অামি উনার কথামত সব খুঁজে বের করতে করতেই উনি চলে
এসেছেন।অামার হাতে হাতে সাহায্য করলেন নাস্তা
বানাতে।বানানোর পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
--অামিনা!অাম্মা ফজর পড়েই অাবার ঘুমান।উঠেন
সাতটার পর,বাড়ির সবাই একই সময়ে উঠে।তুমি একটা
কাজ করো,নিকাব পড়ে নাও,তারপর চলো নাস্তা নিয়ে
অামরা ওই ঘরে যাই!
--অাচ্ছা,এই অালাদা ঘরের কি দরকার ছিল?
--ছিল বৈকি!এটা তোমার হক্ব তো।কয়েকদিন একটু কষ্ট
হবে।তারপরই ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।সবর করো
অামিনা!
নাস্তা নিয়ে ওই ঘরে যখন গেলাম,তখনও শাশুড়ি মা উঠেন
নি।তিনি অামায় নিয়ে টেবিলে খানা সজালেন।মাকে
ডেকে তুললেন।মা অামার সামনে অাসা মাত্র অামি
সালাম দিলাম।অার উনি উত্তর না দিয়েই বলে উঠলেন,
--তুমি এখানে কেন এসেছ?অামার সংসার ভেঙে শান্তি
পাওনি?ঘর অালাদা করে শান্তি পাওনি?হাড়ি অালাদা
করে শান্তি পাওনি?এখন এগুলো এনে ভালমানুষী
দেখাচ্ছো?চেনা অাছে তোমার মত......
--ও অাম্মা!তুমি রাগ করে অাছ এখনও?
শাশুড়ি মায়ের কথার মাঝখানে বলে উঠলেন শায়খ.....
অামিনা,জানো!অাম্মার খুব পছন্দের খানা হলো
নেহারি অার চালের গুড়ার রুটি।অামি অাজকে ফেরার
সময় গরুর পায়া নিয়ে অাসব ইনশাআল্লাহ!ও মা!নাকি
খাসীর পায়া অানতাম?
--কুত্তার পায়া চিনিস?ওইটা এনে তোর বউকে খাওয়া।
অামার সামনে এসব নেকামি করবি না।ভাল সাজতে হবে
না।
এটা বলেই মা উনার রুমের দিকে যাচ্ছিলেন।
অামার শায়খ উনার পা জড়িয়ে ধরে ফেললেন।
--ও মা!তুমি এখনও রাগ করে অাছ?তোমার ছেলের উপর
রাগ করে অাছ গো মা?অামি নাহয় ভুল করেছি,এই
মেয়েটা কি করেছে বলো?ও তো জানতো না,অামি
অালাদা ঘর করছি ওর জন্য।অার ওকে দেখতে গিয়ে তো
তুমিই বলেছিলে,ওকে দেখতে মায়া লাগে খুব।এখন ওকে
এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো কেন?ওর তো দোষ নেই।
--পা ছাড় অামার।ও ই দায়ী,অামার সংসারের ভাঙনের
জন্য ও ই দায়ী।তখন বলেছিলাম ওকে দেখতে মায়া
লাগে।এখন বলি শুন,এরকম কালো মেয়ে অামি অাগে
কখনও দেখিনাই।গায়ের রংটা কেমন ময়লা।অামার ওকে
পছন্দ না।দেখি পা ছাড়।এসব নাটক করিস না।
--ইন্নালিল্লাহ!মা!এসব কি বলো?তুমি তো এমন ভাবে
কথা বলো না।অামার উপর রাগ বলে তুমি অাল্লাহর
সৃষ্টিকে অবজ্ঞা করবে? ও মা! তুমি অামার উপর এখনও
অসন্তুষ্ট? তাহলে দুঅা করো অামি যাতে অাজ রাস্তায়
বের হলে এক্সিডেন্ট করে বসি।জানো তো,মায়ের দুঅা
বিদ্যুৎ গতিতে অাল্লাহর কাছে পৌঁছে।দুঅা করো যাতে
অামি মরি....
--চুপ কর বেয়াদব!তোর মরার জন্য তোকে জন্ম
দিয়েছিলাম অামি?উঠ তুই,উঠ এখনই।
--অাগে বলো মাফ করে দিছ।
--তোকে মাফ করলেও ওই মেয়েকে মাফ করবোনা অামি।
ওর জন্য অামার ছেলে অালাদা হয়ে.....
কান্নায় কথা অাটকে গেলো মায়ের।মা কাঁদছেন।অামার
শায়খও কাঁদছেন।অামার শায়খ খুব অাহ্লাদ করে মায়ের
হাতে খেতে চাচ্ছেন।মা কড়া ভাবে বলে দিয়েছেন,
অামার তৈরি করা নাস্তা খাবেন না।তবুও অামার
শায়খের অাবদারের কাছে হেরে গিয়ে উনাক খাইয়ে
দিচ্ছেন মা।অামার শায়খ অামার হাত ধরে পাশে
বসালেন মায়ের হাতে খাওয়ানোর জন্য।বিড়বিড় করে
কিসব বলার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও অামাকে মা খাইয়ে
দিয়েছেন।অামি হতভম্ব হয়ে বসে ছিলাম।কি করা উচিৎ
বুঝছিলাম না।এমন সময় বড় জা এসে টিপ্পনী
কাটছিলো.....
--ওমা!অাপনি এর হাতের রান্না খেলেন?গতকাল কত
বেলা করে গিয়ে দেখি ও নাপাক মেয়ে,গোসল টুকুও
করেনি।অাজ ও করেনি মনে হয়।এই অশূচী মেয়ের হাতের
খাবার খেলেন অাপনি?
শায়খকে দেখলাম প্রশস্ত হাসি হেসে মায়ের দিকে
তাকিয়ে বলছেন,
--অার বলিও না মা,ওকে এসব তো শেখাতে হবে তাইনা?
এটা তো অামিনার প্রথম বিয়ে, তাই কি করা উচিৎ
বুঝেনা ও।অাজকে কি হয়েছে শুনবে?অাজকে ও.....
--এই ছেলে!তোর মাথা খারাপ?প্রথম বিয়ে মানে কি?
মেয়েদের কি দশ বারোটা বিয়ে হয় নাকি?ও মেয়ে
জানেনা,তো অামাকে জিজ্ঞাস করবে না?শেখার
অাগ্রহ না থাকলে অামি কিভাবে শেখাব?অামি কি
যেঁচে গিয়ে শেখাব নাকি?
অামার ঠেকা,হুহ!
--এই জন্যই তো কালকে তোমাকে ওই ঘরে যেতে
বললাম।তুমি রাগ করে যাওনি।তুমি না শেখালে ও শিখবে
কার থেকে বলো তো?তোমার চেয়ে ভাল শিক্ষিকা এই
দুনিয়ায় অাছে নাকি অার?
অামি বুঝতে পারছিলাম,শায়খ এসব কথা মায়ের মন নরম
করার জন্য বলছেন।তাই অামার অজান্তেই অামার মুখে
হাসি ফুটে উঠেছিল।অাচমকা শাশুড়ি মা অামার দিকে
তাকিয়ে বলে উঠলেন,
--রান্না বান্না কিছু পারো?নাকি সেটাও শেখাতে হবে?
--অল্প একটু পারি,অাসলে.....
--দেখি রান্নাঘরে যাও,ফ্রিজে ডিম অাছে।ভেজে
অানো,যাও।
অামি অাবারও গাধার মত বসে অাছি।রান্নাঘর
কোথায়,ফ্রিজ কোথায়,কিছুই তো জানিনা অামি।
অামতা অামতা করে জিজ্ঞেস করলাম,
--অামি তো রান্নাঘর চিনিনা....কোনদিক দিয়ে......
--হয়েছে অার বলা লাগবেনা।রূপা,যাও তো ওকে
রান্নাঘরে নিয়ে যাও।রান্নাঘরে পৌঁছে দিয়েই চলে
অাসবে।অার দেখি তো তোমার হাতে ফোন অাছে
কিনা।এখন তো মেয়েরা ইউটিউব থেকে দেখে সব রান্না
করে।দেখি হাত দেখাও.......
রূপা অামার বড় জায়ের নাম।ডিম ভাজার সময় অামি
ইচ্ছে করেই নুন দিইনি,শায়খ বলেছিলেন এমন একটা ভাব
করতে যাতে মনে হয় অামি একদমই অানাড়ি।এতে দুইটা
লাভ,
এক.মা বুঝতে পারবেন,তাকে ছাড়া সংসার অচল।
দুই.মা রান্না শেখাবেন।এতে রান্না শেখার বাহানায়
মায়ের কাছে বেশীক্ষণ থাকা যাবে।ফলে দূরত্ব ও কমে
যাবে তাড়াতাড়ি।
অামি শায়খের ট্রিকস ফলো করে ডিম ভেজে মাকে
দিলাম।মা একটুখানি মুখে দিয়েই বললেন,
--অাল্লাহ গো!এইটা কি ভেজেছে?নুন কোথায় নুন??ডিম
ও ভাজতে জানোনা?
--ভুলে গিয়েছিলাম মা,অামি অাবার করে অানছি।
কাতর কণ্ঠে বললাম।
--থাক থাক লাগবে না।তোমার দৌড় অামার বোঝা শেষ!
দেখলি বেটা,কাকে বিয়ে করে অানলি?ডিমও ভাজতে
পারেনা।
--তুমি শিখিয়ে দিও তো মা।অাসলেই দেখছি অামিনা
রান্নাটা পারে না।
--হ্যাঁ,হ্যাঁ!শিখাতে তো হবেই।ঠেকা অামার কিনা!না
শেখালে অামার ছেলেকে ডেইলি না খেয়ে,নুন ছাড়া
খানা খেয়ে থাকতে হবে।অাবার ঘরও অালাদা করেছে
তারা।অামাকে ছাড়া ঘর চলবে?এই মেয়ে,তুমি
তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।এখনই রান্নাঘরে ঢুকবে অামার
সাথে।
মা কড়া নির্দেশ দিয়ে নিজের রুমে গেলেন।অামি
শায়খের দিকে তাকানো মাত্রই তিনি অামায় চোখ
মারলেন।মুখে সেই প্রশান্তির হাসি.............
চলবে ইনশাআল্লাহ............
"শায়খ"
পর্ব অাট.....
প্রথম প্রথম অামি একদমই অানাড়ি ভাব নিয়ে শাশুড়ি
মায়ের কাছে রান্না শিখতাম।কত বকা যে
খেয়েছি,রান্নায় অানাড়ি বলে,তা বলার বাইরে।
প্রতিদিন নিয়ম করে রান্না করতাম মায়ের সাথে।
মাঝেমাঝে হাত পুড়ে যেত,অামি মাছ কাটতে পারতাম
না,প্রথম প্রথম কাটতে গেলে হাত কেটে যেত,অামার
শাশুড়ি মায়ের একটা অভ্যাস হলো,তরকারির যেই
অাইটেমই থাকুক না কেন,গোটা এলাচ ছাড়া রান্না
করলে মা মুখে তুলতে পারতেন না,মায়ের মনমতন করে
রান্না শিখছিলাম।বড় জা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে
চাকুরীরত ছিলেন,অামার শায়খ সকাল নয়টায় বের
হতেন,ফিরতেন রাত নয়টায়।অার দেওররা সকাল দশটা-
এগারোটার পর কেউ ঘরে থাকতো না বললেই চলে।পুরো
বাড়িতে অামি অার মা!তাই অনিচ্ছাবশত হলেও মাকে
অামার সাথে কথা বলতেই হতো।অামি প্রতিদিন বিকেল
বেলা মায়ের চুলে তেল লাগিয়ে দিতাম,বেণী করে
দিতাম।প্রথম প্রথম মা অবজ্ঞা করলেও,ধীরে ধীরে
তিনিও অামার সাথে ফ্রি হচ্ছিলেন।একদিন লাজ লজ্জা
একপাশে সরিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে চোখ নিচু
করে,লজ্জা লজ্জা ভাব এনে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
"মা!নাতী লাগবে?নাকি নাতনী?"
মা কিছুক্ষণ অামার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে
থেকে তেড়ে অাসলেন।অামার অাম্মাকে ফোন করে
একগাদা বিচার দিলেন অামার নামে।পরে অবশ্য নিজেই
হাসতে হাসতে বলেছিলেন,একটা নাতনী লাগবে উনার।
না না!নাতনী না,বোন লাগবে উনার।জিজ্ঞেস
করলেন,কবে দিতে পারব!
শুনে লজ্জায় অামার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।কোনোমতে
রুমে ফিরে শায়খের সাথে কপট রাগ দেখাচ্ছিলাম।অাস
লে এই প্ল্যানটা উনারই ছিলো তো!
ধীরে ধীরে মায়ের সাথে অামার দূরত্ব কমে অাসছিল।
তবে মায়ের মনে ক্ষোভ ছিল,অামাদের অালাদা ঘরের
জন্য।একদিন ইশার পর অামি শায়খকে জিজ্ঞেস
করেছিলাম, অাসলেই কি অালাদা ঘরের প্রয়োজন ছিল?
অামার শায়খ হেসে উত্তর দিলেন,
--এটা তোমার হক তো অামিনা।জানোই তো হাদিসে
অাছে দেওর ভাবির জন্য মৃত্যুর সমান।অার তোমার তো
একটাও ননদ নেই,সবাই ই দেওর,গায়রে মাহরাম।এদের
সাথে তো তোমার পরদা ফরজ, তাইনা?তোমার যাতে
পর্দার সমস্যা না হয়,ফ্রিলি মুভমেন্ট করতে পারো,
তাই ই অামায় অালাদা ঘর করতে হয়েছে।
--কিন্তু এতে লাভ কি?অামায় তো দিনের সিংহভাগ সময়
ই ওই ঘরে থাকতে হয়।যদিও পর্দা করি,কিন্তু অস্বস্তি
লাগে খুব!
--অাশা করা যায় খুব বেশীদিন তোমায় এই কষ্ট সহ্য করতে
হবেনা অামিনা!সবর করো......
--অাচ্ছা,অাপনাদের বাড়ির অাশেপাশে কোনও তালিম
হয়না,মহিলাদের নিয়ে?
--উঁ,বলতে পারছিনা।অাগামীকাল খোঁজ নিয়ে জানাব
ইনশাআল্লাহ!এখন অাসো তো,ঘুমানোর দুঅা পড়ি,জানো
না,রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও
ইশার পর বেশী রাত জাগাকে পছন্দ করতেন না?
--তা তো জানি।কিন্তু অাপনি মনে হয়,কিছু একটা ভুলে
যাচ্ছেন।
--ভুলে যাচ্ছি?!কি বলো তো!
--অাপনি কি ভুলে গেলেন,বুখারী শরীফে
অাছে,ঘুমানোর অাগে উযু করা সুন্নত?!অথচ অাজ অাপনি
উযু না করেই শুয়ে পড়েছেন!
--ইশ!একদম ভুলে গিয়েছিলাম।শুকরিয়া অামিনা,মনে
করিয়ে দেওয়ার জন্য,অামি এখনই অাসছি।
উযু করে এসে শায়খ দুই রাকাত নামায পড়লেন দেখলাম।
অামি তো অবাক হয়ে গেছি!কি অদ্ভুত!!একটু অাগেই না
তিনি মাসজিদ থেকে এলেন,অামার কোলে মাথা রেখে
কুরঅানও পড়লেন।এখন অাবার কিসের নামায!
উনি সালাম ফিরিয়ে উঠতেই উনাকে বললাম,
--এটা কিসের নামায ছিল!?
--এটা?এটা তো তাহিয়্যাতুল উযু ছিল।উযুর পর দুইরাকাত
নফল নামায পড়া।
--এটা কেন পড়লেন?মানে,এটার ফজিলত কি?
--এটা সুন্নাহ তো।রসূলুল্লাহ বলেছেন,'যে ব্যক্তি আমার
অজুর মতো অজু করে এমভাবে দুই রাকাআত নামাজ পড়বে
যে তার মনে কোন অন্য কোন ধারণা/কল্পনা জাগ্রত হবে
না বা মনে মনে অন্য কোন কথা চিন্তা করবে না তাহলে
তার পূর্বের সকল সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে'।
--কই!এতদিন তো এই নামায সম্পর্কে বলেন নি অাপনি।
মানে অাপনি জান্নাতে একা ই যেতে চান,তাইতো?
বুঝলাম।
অামি অভিমানের সাথে এটুকু বলে ওপাশ ফিরে
শুয়েছিলাম।তিনি অামায় টেনে তার কাছে অানলেন।
--এই যে অামিনা!শুনুন,অভ
িমান,অভিযোগ,রাগ,দুঃখ,কষ্ট সব স্বামীর বুকের মাঝে
এসে করবেন,বুঝলেন?এত
ে ভালবাসা বাড়বে।
--লাগবেনা ভালবাসা,যে অামাকে জান্নাতে নিতে
চায়না,তার জন্য কিসের ভালবাসা?ছাড়ুন অামাকে।
--না ছাড়লে কি করবে শুনি?সেদিনের মতন কুঁই কুঁই করে
বলবে,"অাই নিড সাম টাইম...."
বলে হেসে উঠলেন তিনি।প্রায়সময় ই সেদিনের এই
কথাটা বলে রাগান উনি অামাকে।অামি অাগে
রাগলেও,এখন অার রেগে যাইনা।নিজের বোকামির কথা
মনে পড়লে নিজের ই লজ্জা লাগে।
--অামিনা!একটা কথা বলবো,যদি কিছু মনে না করো.......
--ওমা!কি মনে করব অাবার?বলেন তো।
--না,অাসলে....
সেদিন দেখলাম গায়রে মাহরাম কয়েকজন তোমার
ফ্রেন্ডলিস্টে অাছে।পাশাপাশি তুমি উনাদের দাওয়াত
দিচ্ছো।এটা তো ঠিক না অামিনা!
--কেন?ঠিক না কেন? অামি তো বেহুদা অালাপ
করছিনা।দ্বীনের দাওয়াত ই দিচ্ছি,তাহলে সমস্যা
কোথায়?
--ও অামিনা!তুমি জানো,সূরা অাহযাবের বত্রিশ নং
অায়াতে তোমাকে অাদেশ করা হয়েছে,গায়রে
মাহরামের সাথে কথা বলায় কঠোরতা অবলম্বন করতে।
এতে করে তার তোমার প্রতি অাকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা
কমে যাবে।অার এটা তো জানো ই,দ্বীনের দাওয়াতে
কঠোরতা অবলম্বন করতে পারবে না।এর বিরুদ্ধে স্পষ্টত
নিষেধাজ্ঞা অাছে।
--কিন্তু....
--দাঁড়াও বুঝিয়ে বলি।দাওয়াত দেওয়ার নিয়ম
হচ্ছে,দায়ীকে অবশ্যই ই বিনয়ের সাথে,নম্রতার
সাথে,কোমল ভাবে দাওয়াত দিতে হবে।দ্বীনের
দাওয়াতের ক্ষেত্রে কোনওভাবেই কঠোরতা অবলম্বন
করা যাবে না।পাশাপাশি নারীর উপর অাদেশ
অাছে,পরপুরুষের সাথে কথা বললেই কঠোরতা অবলম্বন
করতে হবে।তাহলে তুমিই বলো,একজন নারী একজন গায়রে
মাহরামকে কিভাবে দ্বীনের দাওয়াত দিবে,যেখানে
তার উপর অাদেশ অাছে কঠোরতা অবলম্বন করার,অার
দাওয়াত দানের মূল শর্তই হলো কঠোরতা অবলম্বন না
করা?এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাচ্ছে না?
--তা ঠিক,কিন্তু অামি তো সরাসরি বলছি না।
--জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অনলাইনের বিধানগুলো সম্পূর্ণ
অফলাইনের মতনই হবে গো অাহলিয়া।পাশাপাশ
ি দেখ,এটা ই শেষ নয়,গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলা
তখনই জায়েজ,যখন সেখানে ওযর থাকবে,পাশাপাশি
পরস্পর পরস্পরের উপর অাকৃষ্ট হওয়ার অাশংকা ও থাকবে
না।কিন্তু তুমি একটা বিষয় ভাবো,তুমি যখন গায়রে
মাহরাম কাউকে দাওয়াত দিবে,তখন সে কিন্তু
অাপনাতেই তোমার প্রতি মুগ্ধ হবে।বারবার ভাববে,
"অাল্লাহ!এই মেয়েটা এত জানে!!"
ব্যস!বদনজর লেগে যাবে।
--বদনজর?!অাপনি বদনজরে বিশ্বাস করেন?
--করব না কেন?এটা নিয়ে কত হাদিস অাছে জানো?এই
বদনজর একজন মানুষকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে
যে,কবর পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
--বুঝলাম,তারপর?
--এই দেখো,দ্বীনের লেবাসে শায়ত্বান হাজির!!জানোই
তো নারীর জন্য পুরুষ অার পুরুষের জন্য নারীর জন্য পুরুষের
চেয়ে বড় ফিতনা অার কিছু নেই।পাশাপাশি
দেখো,একজন নারী অার একজন পুরুষ নির্জনে থাকলে
সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শায়ত্বানের উপস্থিতি
থাকে।অার জানোই তো,শায়ত্বান অাদম সন্তানকে
পথভ্রষ্ট করার জন্য কত কু প্ররোচনা দেয়।এইজন্যই তো
দেখো না,বাবা কর্তৃক মেয়ে ধর্ষণ,ভাই কর্তৃক বোন
ধর্ষণ,পরিবারের পুরুষ সদস্য,পাশের বাড়ির প্রতিবেশী
কর্তৃক সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এখন অহরহ হচ্ছে।
--কিন্তু অনলাইনে কি অামরা নির্জনে থাকছি নাকি?
--ইনবক্স!!ইনবক্স তো নির্জন স্থানই,তাইনা বলো?
--বুঝলাম এটা।কিন্তু একটা বাড়তি প্রশ্ন,সেদিন অামি
একটা ফাতওয়া পড়েছিলাম,নারীর কণ্ঠস্বর পর্দার
অন্তর্ভুক্ত নয়,তাহলে.....?
--হু,যথার্থ পড়েছ। নারীর কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্গত নয়।
কিন্তু খেয়াল করো,প্রতিবারই কথা বলা তখন জায়েজ
হবে,যখন কথা বলার একান্ত জরুরত হবে,পাশাপাশি
অাকৃষ্ট হওয়ার অাশঙ্কাও থাকবে না।
--তাহলে অাপনিই বলুন,অাম্মাজান অায়শা কি হাজার
হাজার সাহাবাকে হাদীস শিক্ষা দেন নি?কিভাবে
দিয়েছেন?
--উনি দিতে পেরেছেন,কারণ পরিস্থিতি উনার অনুকূলে
ছিল।রসূলুল্লাহর ওফাতের পর তার স্ত্রীদের অন্য পুরুষ
কর্তৃক বিবাহ করা হারাম ছিলো।পাশাপাশি
সাহাবাদের ঈমান এতই তেজদীপ্ত ছিলো যে,তারা দৃষ্টি
অবনত রাখতেন,অাম্মাজানের প্রতি অাকৃষ্ট হওয়া তো দূর
কি বাত,সর্বদা সকল প্রকার কলুষতা থেকে মুক্ত থাকার
চেষ্টা করতেন।কিন্তু তোমার পরিস্থিতি তো
ভিন্ন,তাইনা বলো?
অামি চোখ বন্ধ করে মনের গভীর থেকে রব্বের কাছে
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।অার অামার শায়খকে যাতে
ইহকাল অার অাখিরাত,উভয় কালেই জাযাহ দেন,তা
প্রার্থনা করলাম।চোখ খুলে দেখি অামার শায়খ
ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে অাছেন অামার দিকে।এবার
অামি ঠিক উনার উল্টোটা করলাম,তাকে চোখ মারলাম!!
প্রথমবারের মতন।তারপরই মোবাইলটা হাতে নিয়ে
ফেসবুকে লগিন করলাম।এখন অামার কি করণীয়,অামি তা
জানি।
ইনশাআল্লাহ চলবে.........
"শায়খ"
পর্ব নয়.....
ফজরের পর উনি কুরঅান নিয়ে এসে বললেন,
--এই নাও।অাজ তুমি কুরঅান পড়ো তো,অামি দেখি,
কোথাও ভূল হয় কিনা।
--অাপনার মুখে মুখে পড়লেই তো সঠিকভাবে পারব
কুরঅান পড়তে।
--না অামিনা,পারবে না।
--কারণ?
--কারণ হচ্ছে,তাজউইদ!কুরঅান তাজউইদের সাথে
তিলাওয়াত করা ফরজ।নাহয় অর্থের বিকৃতি ঘটতে পারে।
যেমন ধরো,অামাদের কালিমা তাইয়্যিবার প্রথম অংশ
কি বলোতো?"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" না?এবার এটার
অর্থ বলো তো?
--হ্যাঁ....অর্থ হলো,অাল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।
--এই দেখো,এই 'লা' বলার সময় একটা টান অাছে।দেখো
তোমায় অারবীটা দেখাই,এটা কি?লাম অালিফ যবর লা..
না?কিন্তু তুমি যদি টান না দিয়ে পড়ো,তাহলে সেটা হবে
'লাম' যবর লা,তখন এই পূর্ণ কালিমার অর্থ বদলে যায়,তখন
এই কালিমার অর্থ হবে,'আল্লাহ ছাড়া নিশ্চয়ই মাবুদ
আছে'
নাউযুবিল্লাহ,দেখলে তো কিভাবে অর্থটা বদলে গেল?
অাবার দেখো,সূরা ইখলাসের প্রথম অায়াত,ক্বুল হু
ওয়াল্ল হু অাহাদ।খেয়াল করো,শুরুতে যে হরফ
অাছে,সেটা কিন্তু কাফ( ﻙ ) নয় ক্বফ ( ﻕ )।এই হরফটা
উচ্চারণের সময় তোমায় একটু ধাক্কা দিয়ে উচ্চারণ করতে
হবে।তখন এই ক্বুল শব্দটির অর্থ হবে বলো,অার পুরো বাক্য
'ক্বুল হু ওয়াল্লহু অাহাদ' এর অর্থ হবে,'বলো,তিনিই
অাল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়'।
কিন্তু তুমি যদি ক্বুল শব্দটা উচ্চারণের সময় ক্বফের উপর
জোর না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে 'কুল' পড়ে যাও,তখন পুরো
বাক্যটির অর্থ হবে,'খেয়ে ফেলো অাল্লাহ
এক',অাস্তাগফিরুল্লাহ!
তারপর অাবার দেখো,একই রকম যেসব অক্ষর অাছে,যেমন
ক্বফ( ﻕ )-কাফ( ﻙ ) , হা( ﺡ ),-হা( ﻩ ),অা
লিফ( ﺍ )-অাইন( ﻉ ) - হামযা( ﺀ ),ছা( ﺙ ) - সোয়াদ( ﺹ )-সিন
( ﺱ ) ,তা( ﺕ )-ত্বোয়া( ﻁ ),জিম( ﺝ )-যাল( ﺫ ) -যোয়া
( ﻅ ),লাম( ﻝ ) -লামঅালিফ( ﻻ) .. ....
এই শব্দের উচ্চারণ গুলো কিছুটা কাছাকাছি বলে অামরা
একই উচ্চারণ দিয়ে সমজাতীয় সবগুলো হরফকে উচ্চারণ
করি।বাস্তবিকভাবে তোমার মনে হবে,এটা তো নরমাল ই।
কিন্তু অাসলে তা না!এটার জন্য
অর্থের কত মারাত্মক বিকৃতি হয়ে যায়!
--বুঝলাম শায়খ,বুঝলাম.....
এখন অাপনি বলুন তো,অাপনি মাশাঅাল্লাহ এত কিছু
কিভাবে জানেন?হিফয করেছিলেন?
--নাহ,হিফয করার সৌভাগ্য অামার হয়নি।অার
কেবলমাত্র হিফয করলেই সহীহভাবে পড়তে পারব,নাহয়
পারব না,এটা কে বললো অামিনা?তাজউইদ শেখা তো
ফারজে অাইন।সেটা শেখা তো প্রত্যেকটা মুসলমানের
উপর ফরজ।
--ফারজে অাইন?সেটা অাবার কি?
--সেটাও এক প্রকার ফরজ অারকি।
--মানে?ঠিক বুঝলাম না।
--ফরজ মানে কি বলো তো?ফরজ মানে হলো যেটা করতেই
হবে,অর্থাৎ অবশ্য পালনীয় কাজ,বুঝেছ?
--হু,তা তো জানি ই।
--অার এই ফরজ দুই প্রকার,
১.ফারজে অাইন।
২.ফারজে কেফায়া।
এখন অাসি ফারজে অাইন নিয়ে কেমন?
প্রাপ্ত বয়স্ক সবার উপর যাই বাধ্যতামূলক তাই ফরজে
অাইন। যেমন,পাঁচওয়াক্ত নামাজ ও রমজানের
রোজা,সামর্থ্য হলে হজ্ব,যাকাত,পর্দা,তাজউইদসহ
কুরঅান তিলাওয়াত,ইত্যাদি।
অার ফারজে কেফায়া হলো,যা মুসলমানের জন্য ফরজ
কিন্তু সবার পক্ষ থেকে একজন পালন করলে সবার অাদায়
হবে তা।
যেমন, জানাযার নামাজ,হিজরী তারিখের হিসাব
রাখা,পরশুদ্ধি ইত্যাদি.....
বুঝলে?ক্লিয়ার হলো?
--হু,বুঝলাম।অাচ্ছা,এখন তো সকাল হয়ে গেছে।অামরা
কালকে থেকে পড়বো কেমন?
--না,এখন থেকেই পড়বো।জানো সূরা মুযযম্মিলের চার নং
অায়াতে অাল্লাহ অামাদের স্পষ্টভাবে কুরঅান
তিলাওয়াতের অাদেশ দিয়েছেন।অার জানো হাদিসে
অাছে,"তোমরা তোমাদের ধ্বনির সাহায্যে কুরআনকে
সুষমামন্ডিত কর, অথবা তোমরা কুরআনকে তাজউইদ ও
তারতীলের সাথে সুন্দরভাবে পাঠ কর।"
সম্ভবত এটা অাবু দাউদের ১৪৬৮ নং হাদিস।এখন দেখি
এদিকে এসো।খাতাটা দাও।অামি লিখছি তাজউইদ
কি.........
ইনশাআল্লাহ চলবে....
"শায়খ"
পর্ব দশ.....
--বুঝলে অামিনা,এই তাজউইদ জিনিস টা কিন্তু খুবই মজার
একটা বিষয়।প্রথমে দেখ,'মাখরাজ,সিফাতুল হুরুফ বা
হারফের বৈশিষ্ট্য,নুন সাকিন,তানউইন,মিম
সাকিন,উচ্চারণের পদ্ধতি,মাদ,ওয়াক
ফ,ইবতিদা'
মাত্র এই অল্প কয়টা পার্ট নিয়েই কিন্তু তাজউইদ গঠিত।
কাজেই তাজউইদ শিখতে খুব একটা কষ্ট হবেনা
ইনশাআল্লাহ!তাহলে শুরু করি?
--করুন।
--আরবী শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য মাখরাজের গুরুত্বের শেষ
নেই।মাখরাজ হলো অারবী শব্দগুলো উচ্চারণের স্থান।
যেমন অামরা বাংলা বর্ণমালার সাতটি উচ্চারণ স্থল
অাছে,তেমনই অারবী বর্ণমালার সতের টি উচ্চারণস্থান
অাছে।
--বাংলা বর্ণমালারও উচ্চারণ স্থল অাছে!!!!
--হ্যাঁ,থাকবে না কেন?তুমিই দেখো না,"ম" বর্ণটা উচ্চারন
করতে তোমায় যেমন দুই ঠোঁটের সাহায্য নেওয়া
লাগে,"ক" বর্ণ উচ্চারণ করতেও কি দুই ঠোঁটের প্রয়োজন
হয়?
--না,তা না।কিন্তু.......
অাচ্ছা সাতটা স্থান কি কি,একটু বলুন তো!
--বলতে গেলে তো দেরি হয়ে যাবে অামিনা।পরে বলবো
নাহয়,অাগে মাখরাজ গুলো সম্পর্কে শুনো।
--না না,মাথায় একটা চিন্তা ঘুরছে।অাগে ওটা সমাধান
করতে হবে।
--কি চিন্তা?কিসের সমাধান?
--অাসলে,অারবী বর্ণমালা সবগুলোই তো বাংলায়
উচ্চারণ করা যায়।তাহলে বাংলা বর্ণমালা উচ্চারণের
স্থান সাতটি,কিন্তু অারবী বর্ণমালা উচ্চারণের স্থান
সতেরো টি...........
বিষয়টা কেমন এলোমেলো লাগছে না?যেমন ধরুন 'বা( ﺏ )'
এর কথা।বাংলায় ব এর সাথে অাকার যোগ করলেই তো
অারবীতে বা( ﺏ ) উচ্চারিত হয়।অাবার ধরুন "হা( ﺡ )" এর
কথা,বাংলায় হ এর সাথে অাকার যোগ করলেই তো
অারবীতে হা( ﺡ ) এর উচ্চারণ হবে।
অর্থাৎ অারবী সবগুলো হরফের উচ্চারণ তো বাংলা
হরফের দ্বারা করা যায়,তাইনা?তাহলে বাকি দশটি
অতিরিক্ত স্থানের কি দরকার উচ্চারণের জন্য?
--এটাই তো পয়েন্ট অামিনা।তুমি দেখো,অামি কিন্তু
প্রতিবারই বলছি "তাজউইদ" কিন্তু বাংলায় পড়তে গেলে
তুমি সবজায়গায় এই শব্দটাকে পাবে 'তাজবীদ' হিসেবে।
এখন বলো,কোনটা সঠিক হওয়া উচিৎ?
--অবশ্যই তাজবীদ।
--না,তাজউইদ সঠিক হবে।কারণ অামরা ছোটবেলায় ওয়াও
( ﻭِ ) যের 'বি( ﺏِ )' শিখি,যেটার অাসল উচ্চারণ হবে ওয়াও
( ﻭ ) যের 'উই( ﻭِ )'।
বুঝলে?পাশাপাশি দেখবে,অারবীতে দেখবে 'জিম( ﺝ )-
যাল( ﺫ ) - যোয়া( ﻅ )-ঝা( ﺯ )' শব্দগুলোকে অামরা 'জ' এর
মতন করে উচ্চারণ করি।অর্থাৎ সবগুলোকে একই রকম করে
উচ্চারণ করি।কিন্তু এদের উচ্চারণ অালাদা অালাদা।
অামি একটু অাগেই তোমাকে দেখিয়েছি সামান্য
একটুখানি উচ্চারণের জন্য অায়াতের অর্থ কিভাবে
বদলে যায়,দেখিয়েছি না?
--হ্যাঁ,কিন্তু বাজারে যে বাংলায় অনুবাদ করা কুরঅান
শরীফ গুলো পাওয়া যায়,ওখানেও তো এই হারফগুলোকে
একইভাবে উচ্চারণ দেখায়।
--হ্যাঁ,ওটাই তো বলছি।তুমি পড়তে গেলে দেখবে জিমের
( ﺝ ) উচ্চারণ এক রকম,যাল( ﺫ ) এর উচ্চারণ অারেকরকম।
যোয়ার( ﻅ ) উচ্চারণ এক রকম,ঝার( ﺯ )উচ্চারণ অারেক
রকম।
কিন্তু বাংলায় খেয়াল করবে,এই হারফগুলোর উচ্চারণ
বোঝানোর জন্য "জ" অার "য" ব্যবহৃত হয়।অাবার
দেখো,ওয়াও( ﻭ ) এর উচ্চারণের সমমানের কোনও বাংলা
বর্ণ নেই বলে এটার উচ্চারণ বা( ﺏ ) এর মতন করা হয়।
ক্বফের( ﻕ ) উচ্চারণ লিখার সময় যদিও ক এর নিচে ব হসন্ত
দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই উচ্চারণটা একটু ভিন্ন,তবুও
অামরা সাধারণ মানুষ না বুঝে "কাফ( ﻙ )" এর মত উচ্চারণ
করে ফেলি।অথচ এই দুইটা হারফের উচ্চারণে বিস্তর
পার্থক্য।এই একই অবস্থা তুমি দেখবে অন্যান্য অারবী
সমজাতীয় হুরুফের মাঝেও।অাসলে বাংলা শব্দ ভাণ্ডার
কানায় কানায় পূর্ণ হলেও অারবী হুরুফ উচ্চারণের সমান
উচ্চারণ পূর্ণ বাংলা শব্দ খুব একটা বেশী নেই।এবার
বুঝলে মাখরাজ সতেরো টি,কিন্তু বাংলা বর্ণমালার
স্থান সাতটি হওয়ার কারণ?
--জ্বি বুঝলাম।কিন্তু হারফ অার অার হুরুফ কি?
--অারবী প্রতিটা বর্ণকে অালাদা অালাদা ভাবে
বোঝালে তখন প্রতিটা অালাদা বর্ণকে হারফ
বলে,বাংলায় যেটাকে অামরা হরফ বলি অারকি।অার
হারফ হলো একের অধিক হরফের সমষ্টি।
--অর্থাৎ হারফ হলো বর্ণ,অার হুরুফ হলো
বর্ণমালা,তাইতো?
--ঠিক তাই।এবার এসো সিফাতুল হুরুফ নিয়ে কথা বলি।
সিফাত মানে তো জানো ই,গুণ বা বৈশিষ্ট্য।সিফাতুল
হুরুফ হচ্ছে হারফগুলোর বৈশিষ্ট্য।এটা ভিন্ন ভিন্ন
হারফের উচ্চারণ যাতে একই না হয়,সে দিকটা নিশ্চিত
করে।তারপর দেখো,নুন সাকিন অার তানউইনে।
এর অাগে অামি তোমাকে হারকাতের সংজ্ঞা বলি
কেমন?বাংলায় যেমন অা-কার(া),ই-কার(ি),দীর্ঘ-ই কার
(ী) অাছে।তেমনই অারবী হারফ দ্বারা শব্দ গঠনের জন্য
যবর,যের,পেশ অাছে।বাংলায় যদি তুমি বলো 'অম বংলদশ
থক' তাহলে কি এটার কোনও অর্থ অাছে?নেই না!
কিন্তু তুমি যখন স্বরচিহ্ন যোগ করে বলবে,
'অামি বাংলাদেশে থাকি' তখন এটা কেবলমাত্র শব্দেই
না,অাদর্শ একটি বাক্যেও পরিণত হয়।তেমনভাবেই
অারবী বর্ণ 'অালিফ,লাম,হা,মিম,দাল,লাম,হা' একত্রিত
করে ' ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻪ ' বললে এটা কোনও বাক্য তো দূরে থাক,শব্দই
হবে না।কিন্তু যখনই তুমি এই হারফগুলোতে
যবর,যের,পেশ,সাকিন যু্ক্ত করবে,তখন এটি
"অালহামদুলিল্লাহ" তে পরিণত হবে।যা কেবলমাত্র
একটি শব্দ ই না।বরং একটি সফল বাক্যও বটে।এখন
দেখো,এক যবর,এক যের অার এক পেশ কে হারকাত বলে।
বুঝলে?
অার সাকিন মানে তো জানো ই,জযম।নুন সাকিন মানে
হলো সাকিনযুক্ত নুন,বা এমন নুন,যেই নুনে হারকাত নেই।
অার তানউইন হলো দুই যবর,দুই যের,এবং দুই পেশ বুঝলে?
--বুঝলাম,তারপর?
--তারপর হলো মিম সাকিন।মিম সাকিনও নুন সাকিনের
অনুরূপ। অর্থাৎ সাকিনযুক্ত মিমকেই মিম সাকিন বলে।
এরপর হলো মাদ।মাদ অর্থ টেনে পড়া।একটু অাগে বললাম
না,'লা ইলাহা ইল্লাল্লহ' পড়ার সময় 'লা' তে এক অালিফ
টান দিতে হবে।তেমনই তুমি দেখবে কুরঅান শরীফে তুমি
দেখবে কিছু কিছু স্থানে,কিছু কিছু হুরুফে টান দিতে
হচ্ছে।এই টান দেওয়াটা ই হলো মাদ করে পড়া।
--কিন্তু অামি বুঝবো কিভাবে কোথায় কোথায় মাদ
করতে হবে?
--এটা তো সোজা।মাদের নির্দিষ্ট তিনটি হারফ অাছে।
পাশাপাশি এর কিছু নিয়মও অাছে।অপেক্ষা করো
অাহলিয়া,ধীরে ধীরে শিখবে।
--অাচ্ছা,তারপর?
--তারপর অার মাত্র তিনটা টপিক,ওয়াকফ,ইবতিদা অার
উচ্চারণের পদ্ধতি।ওয়াকফ মানে হলো থেমে যাওয়া।এর
নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন অাছে।অার ইবতিদা মানে হলো শুরু
করা।ওয়াকফ করার পর পড়া অাবার শুরু করাটা হলো
ইবতিদা।বুঝলে?
--হ্যাঁ বুঝলাম।অার উচ্চারণের পদ্ধতি বলতে?মাখরাজ
পড়লেই তো বোঝা যাবে হুরুফের উচ্চারণ সম্পর্কে।
--না অাহলিয়া,বোঝা গেলেও সম্পূর্ণ ভাবে বোঝা
যাবেনা।
মাখরাজ হলো কোন হারফ কোন স্থান হতে উচ্চারিত হবে
সেই স্থান গুলোর পরিচয়।অার উচ্চারণের পদ্ধতি বলতে
অামি বুঝিয়েছি উচ্চারণ গুলো কেমন হবে,হালকা না
ভারী,মোটা না চিকন,এইগুলো।
--অাচ্ছা,বুঝলাম তারপর?
--তারপর অার কি?অামি তোমাকে তাজউইদ সম্পর্কে
প্রাথমিক ধারণা দিলাম।এখন তোমার কাছে দুইটা অপশন
অাছে।
১.পাশের এলাকায় একটা মহীলা মাদরাসা অাছে
সেখানে গিয়ে তাজউইদ সহ কুরঅান তিলাওয়াত শেখা।
২.বাসায় একজন উস্তাযা রেখে শেখা।
তুমি কোনটা করতে চাও?
--মানে টা কি?অাপনি শেখাবেন না?
--না।
--কেন?
প্রশ্ন শুনে শায়খ একপ্রকার চমকে অামার দিকে
তাকালেন।
অাসলে কথাটা থমথমে গলায় বলে ফেলেছি।অবশ্য বলতে
গিয়ে কণ্ঠটা একটু ধরেও এসেছিল।মনে একরাশ অভিমান
জমা হয়েছে।অাসলে সমস্যা টা কোথায়!এই মানুষটা যদি
এভাবেই ভালবেসে অামাকে তাজউইদ শেখায় তাহলে
কি এমন হবে?চোখ ঝাপসা হয়ে অাসছে।অামার এই এক
স্বভাব।পান থেকে চুন খসলেই কষ্ট লাগে,কান্না অাসে।
সম্ভবত অামার এই অবস্থা দেখেই উনি ব্যস্ত হয়ে উঠে
দাঁড়ালেন।অামার সামনে এসে হাঁটুগেড়ে বসে হাতগুলো
উনার হাতের মুঠোয় পুরে নিলেন।খুব শান্ত কণ্ঠে বললেন,
--অামিনা!তোমার চোখে পানি কেন?অামি কি তোমায়
কষ্ট দিয়েছি?
অামি তো তোমার ভালোর জন্যই উস্তাযা কিংবা
মাদরাসায় গিয়ে পড়ার কথা বলছি।অামি চাই অামার
অাহলিয়া একদম সহীহ ভাবে কুরঅান শিখুক।পাশাপাশি
ছোট ছোট সূরা গুলো অাস্তে অাস্তে মুখস্থ করে ফেলুক।
বড় সূরা গুলো নাহয় অামরা একসাথে মুখস্থ করবো।
এখন তুমি বলো তো,মাদরাসায় গিয়ে পড়বে?অবশ্য অামার
কাছে ঘরে উস্তাযা রেখে শেখাটাকেই ভালো মনে
হচ্ছে।
অামি দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকালাম।শায়খের
কথায় যুক্তি থাকলেও অামার উনার এই সিদ্ধান্ত পছন্দ
হয়নি।উনার কাছ থেকেই তো কত সুন্দর করে শিখতে
পারতাম!ভালোই তো লাগে এভাবে শিখতে,তারপরও
উস্তাযা কেন......!
--বেলা হয়ে যাচ্ছে।অামি উঠি,অামায় নাস্তা বানাতে
হবে।
বলে চলে অাসছিলাম।হটাৎ উনি বলে উঠলেন,
--একটা সুখবর অাছে অাহলিয়া।খোঁজ নিয়েছি অামি।
অামাদের এলাকাতেও মহীলাদের তালিম হয়,প্রতিদিন
হয়।খোঁজ নিয়ে দেখলাম নির্ভরযোগ্য, তুমি গিয়ে দেখতে
পারো।
--কোথায় হয়?কারো বাড়িতে?
--হ্যাঁ,অামাদের এলাকায় যে বড় মাসজিদটা অাছে,ওই
মাসজিদের মুয়াজ্জিনের বাসায়।সার্বিক তদারকি উনার
স্ত্রী ই করেন।উনার স্ত্রী অার চার মেয়ে।এর মাঝে ছোট
মেয়েটা মিশকাতে পড়ছে।বাকি তিনজনই অালিমা অার
ওদের মাও অালিমা।তোমার কোনও সমস্যা হবে না
ইনশাআল্লাহ।
উনার এই কথা শুনে সব অভিমান কোথায় যেন মিলিয়ে
গেলো।মন চাচ্ছিলো এখনই দৌঁড়ে শ্বাশুড়ি মাকে নিয়ে
তালীমে যেতে।কখনও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।না জানি
কত সুন্দর হবে তালীমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা টা।অামি
চোখ বুজে খানিকটা শব্দ করে অালহামদুলিল্লাহ বলে
উঠলাম।
--কি গো অাহলিয়া?অামি এত কষ্ট করে খোঁজ নিলাম।
অার অামার অাহলিয়া অামায় ধন্যবাদটুকুও দিলো না!
কপট অভিমানের সাথে বললেন শায়খ।অামি লজ্জায়
চোখ নিচু করে ফেললাম।অাসলেই তো উনাকে ধন্যবাদ
দেওয়া উচিৎ। অাস্তে করে বললাম,
--ঠিক অাছে,খোঁজ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
--উঁহু,ধন্যবাদ নয়।বলো "জাযাকাল্লাহু খয়রন"।এটা সুন্নাহ
তো।
--এই বাক্যটা অনেক জায়গায় দেখেছি অামি।এটার
মানে কি?
--এটার মানে হলো,"অাল্লাহ অাপনাকে উত্তম প্রতিদান
দিন।"
অার কেউ যদি তোমাকে জাযাকাল্লাহু খয়রন বলে,
তাহলে তুমি তাকে উত্তর দিবে,'ফা জাযাকুমুল্লাহু খয়রন'
বলে,কেমন? অবশ্য 'ওয়া অান্তুম ফা জাযাকাল্লাহু
খয়রন,ওয়া ইয়্যাক' ও বলা যায়।
এর অর্থ হবে,"আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিন"।
বুঝলে?
--হ্যাঁ,বুঝলাম।এবার রান্নাঘরে যাই কেমন?অাসসালামু
অালাইকুম।
ইনশাআল্লাহ চলবে.......
"শায়খ"
পর্ব এগারো....
বেলা তিনটা করে মাকে সাথে নিয়ে গেলাম তালিমে।
মাকে রাজি করাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি অামার।
যখন নির্দিষ্ট বাড়িতে পৌঁছালাম,অামার গলা শুকিয়ে
যাচ্ছিলো,হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছিলো,এক ধরণের অজানা
অাতঙ্ক হচ্ছিলো।বরাবরই শুনে এসেছি এইসব তালিমে
জাল,বানোয়াট,বিদঅাতি মাসঅালার শিক্ষা দেয়,তবুও
ভরসা,শায়খ বলেছেন এই তালিম টা নির্ভরযোগ্য।
পাশাপাশি তিন মেয়ে সহ মা অালিমা,অারেক মেয়ে
মিশকাতে পড়ছে,বাবা মুয়াজ্জিন,গড়মিল থাকার কথা
না।অাল্লাহর নাম নিয়ে দরজায় নক করলাম।পরপর
তিনবার নক করতেই খুলে গেলো।অাপাদমস্তক ঢাকা
একজন এসে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করলেন,ভেতরে
গিয়ে বসতেই দেখি প্রায় জনা ত্রিশেক
নারী,বেশীরভাগ ই অামার বয়সী।এটা ভেবে ভালো
লাগলো যে,তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ এখনও অামার
রব্বের হিদায়াহর ছায়ায় অাছে।অালহামদুলিল্লাহ,সুম্মা
অালহামদুলিল্লাহ!!
নিকাবটা খুলবো কিনা তা নিয়ে একটু ইতস্তত করছিলাম।
এগিয়ে এলেন সেই অান্টি টি।নিজের নিকাব খুলে
অামায়ও নিকাব খুলতে বললেন।গ্লাসে করে পানি
এগিয়ে দিলেন পরম অাদরে,মুখে প্রশস্ত এক হাসি,ঠিক
অামার শায়খের মতন।এক মুহূর্ত ভাবলাম,যারা একটুখানি
দ্বীনের পথে চলে,তাদের দেখলেই বুঝি মন ভরে যায়!
অামার শায়খ,এই যে পঞ্চাশোর্ধ অান্টি,তালিমের
বাকি মানুষগুলো।একরাশ মুগ্ধতা ছেয়ে রেখেছিলো
অামায়।
সেদিনের অালোচ্য বিষয় ছিলো "নামাযের গুরুত্ব,স্বলাত
অাদায়ে উদাসীনতা অার বে নামাযীর শাস্তি"।অামি
অবাক হচ্ছিলাম অান্টির উপস্থাপনা দেখে।নামাযের
গুরুত্ব বলতে বলতে তার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলো,বে
নামাযীর শাস্তি বলার সময় হুহু করে কেঁদে উঠছিলেন
তিনি।অাশপাশের সবার চোখ ভেজা,এমনকি অামার
শাশুড়ি মায়েরও।ওই অান্টিটা যখন বলছিলেন,
"তোমরা কিছু করো না অার না করো,নামায অাদায়
করো।সময় বয়ে যায়,কে কখন চলে যাব অামাদের অাসল
বাড়িতে।তখন অামাদের ঝুলিতে একমাত্র অামল ছাড়া
কিছু তো থাকবেনা।একমাত্র নামাযই অামাদেরকে
হিসাব নিকাশের পর সাকারে যাওয়া থেকে দূরে রাখতে
পারবে........."
অামি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।তার বাচনভঙ্গি এমন
ছিলো যে অামার অন্তর কেঁপে উঠছিলো।সম্বিৎ ফিরলো
অাসরের অাজান শুরু হওয়ার সময়।একসাথে সবাই
অাযানের উত্তর দিলাম।অাযান শেষে দুঅা করলাম।
তারপর সবাই হাত তুলে মোনাজাতে দুঅা করলাম।
মোনাজাতের পর সবাইকে দুটো করে খেঁজুর অার
একগ্লাস ঠান্ডা পানি খেতে দেওয়া হলো।ফেরার সময়
খেয়াল করলাম মা যিকর করছেন,বিভ্রান্ত
ের মতন এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন।সারা রাস্তা অামার
সাথে কথা বলেন নি।ঘরে গিয়ে নামায পড়ে
কাঁদলেন,অনেক কাঁদলেন।মনের ভেতর তখন কেমন অনুভূতি
হচ্ছিলো বলে বোঝাতে পারবো না,এটাই ছিলো অামার
উপর,অামার শাশুড়ি মায়ের উপর অামার রব্বে কারীমের
নিয়ামত,
সুবহানআল্লাহ!অালহামদুলিল্লাহ!অাল্লাহু অাকবার!!!
যতই দিন যাচ্ছিলো,মা একটু একটু করে দ্বীনের পথে
অাসছিলেন,বাসায় নামাযের সময়সূচীর চিরস্থায়ী
ক্যালেন্ডার থাকা সত্ত্বেও মা একটু পরপর এসে
জিজ্ঞেস করতেন,
"এই মেয়ে,দেখো তো তোমার মোবাইলে,নামাযের
ওয়াক্ত হলো কিনা"।
অারও খেয়াল করলাম মা চাশতের,ইশরাকের নামাযও
পড়ছেন। সালাতুত তাসবীহ অার তাহাজ্জুদ তো একদমই
ছাড়ছেন না।ওয়াক্ত হওয়ার পরও অামি যদি একটু বিলম্ব
করতাম নামায পড়তে,মা কড়া গলায় ধমকাতেন।বলতেন,
"কি হ্যাঁ?নামায পড়বে না নাকি?ফিরিশতাদেরকে বলিও
না যে সংসারের কাজ সামলাতে গিয়ে নামায পড়তে
পারোনি।অবশ্য বললেও লাভ হবে না।তাড়াতাড়ি
যাও,নামায পড়ো।পরে হাজার অামল থাকলেও যদি এই
নামাযের জন্য তোমাকে সাকারে যেতে হয়,তাহলে
কিন্তু অামি বেহেশতের কোনও হুরপরির সাথে অামার
ছেলের বিয়ে দিয়ে দিব।"
মায়ের ধমক শুনে অামি হাসতাম,দ্বীনের পথে প্রথম প্রথম
এলে চল্লিশোর্ধ কেউ ও যে ছয় বছরের বাচ্চা মেয়ের
মতন শিশু হয়ে যায়,তা অামি স্বচক্ষে এই প্রথমবারের মতন
দেখলাম।মাঝেমাঝে উনার অামল করা দেখলে অামারই
হিংসা হতো।প্রতিযোগীতা করে অামল শুরু করেছিলাম
মায়ের সাথে।সেই অনুভূতিগুলো অন্যরকম,একদম অন্যরকম।
হটাৎই একদিন তালিমে "স্ত্রীর অধিকার,স্ত্রীর কর্তব্য"
নিয়ে অালোচনা হচ্ছিলো।তীব্রভাবে ঝাঁকি খেলাম
যখন অান্টি বললেন,
"জাহেলিয়াত!জাহেলিয়াত!!এটা সম্পূর্ণ জাহেলিয়াত!
দেওর ভাবির কাছে মৃত্যুর সমান হওয়া সত্ত্বেও মানুষ
ভাবিকে দেওরের মায়ের সমান বলে তূলনা করে।দেওর
ভাবির মাঝে কোনও পর্দা নেই,যা তা অবস্থা।তার উপর
সমাজের একটা ধারণা হয়েছে বউ শ্বশুড়-শাশুড়ির সেবা
করবে,একটু এদিক সেদিক হলে সংসারে অশান্তি থেকে
শুরু করে তালাক পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে,যেন এটা ফরজ
ওয়াজিব কিছু।অাহারে মায়েরা শুনুন,ছেলের বউ
অাপনাদের জন্য যা কিছু করে,তা একপ্রকার সাদকাহ
অার মানবিকতা।এটার জন্য ওরা কিন্তু বাধ্য না।অথচ
সমাজের নীতি হলো এমন,শ্বশুড় শ্বাশুড়ির সেবা করবে
ছেলের বউয়েরা,অার নিজের মা বাবা চুলোয়া
যাক,তাতে কার কি"......"
অামি খেয়াল করলাম মা সবটুকু কথা যেন গোগ্রাসে
গিলছেন।সারা পথ গম্ভীর ছিলেন।অামার শায়খের একটা
স্বভাব হলো তিনি এসে অাগে মায়ের খোঁজ নেন।মায়ের
জন্য এটা সেটা নিয়ে অাসেন।মায়ের হাই
বিপি,পাশাপাশি ইদানিং মায়ের ডায়াবেটিস সহ অারও
এই সেই অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে।প্রতিদিন গিয়ে শায়খ
চেক করে অাসেন মায়ের ওষুধ খাওয়া ঠিকঠাক হচ্ছে
কিনা।সেদিন শায়খ অাসার অাধঘন্টা অাগ থেকেই মা
ছটফট করছিলেন,বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন।শায়
খ ফেরার পরপরই মা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন,
--বেটা তুই তো ইসলাম নিয়ে পড়িস অনেক।তুই জানবি
নিশ্চয়।শ্বশুড় শাশুড়ির সেবা করা নাকি ফরজ না?
--হ্যাঁ,না ই তো।হাদিসে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু অালাইহি
ওয়া সাল্লাম তাকে অভিশাপ দিয়েছেন,যার জীবদ্দশায়
মা-বাবা কিংবা কেবলমাত্র একজন বেঁচে থাকা
সত্ত্বেও যে তাদের সেবা না করে জাহান্নামে যাবে।
পাশাপাশি একবার এক লোক,রসূলুল্লাহর কাছে জিহাদে
যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি ওই ব্যাক্তিকে ঘরে গিয়ে
নিজের বাবা মায়ের সেবা করতে বলেছেন।তুমি খেয়াল
করো,একবারও কিন্তু শ্বশুড় শাশুড়ির কথা বলেন নি।
অাসলে মা যার যার বাবা মায়ের খিদমাহ করার দায়িত্ব
তার তার।
--তাহলে এই মেয়েটা অামার খিদমত করে কেন?
অামার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন মা।
--অামিনা?ও তো তোমাকে ভালবেসে করে,বেশী বেশী
নেকি কামাই করে জান্নাতে যাওয়ার জন্য করে।
--কিন্তু ও যদি ওর বাবা মায়ের খিদমত না করে,তাহলে
ওর গুনাহ হবে না?
--উঁ,হতে পারে।
--তখন ফিরিশতারা কারণ জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয় ও
বলবে শাশুড়ির সেবা করতে গিয়ে বাবা মায়ের সেবা
করতে পারেনি।
--হ্যাঁ,এটাও বলতে পারে।
--তাহলে শুন,একটা কাজ কর।টেবিল থেকে খাতাটা নে
তো।অামি বলছি তুই লিখা শুরু কর।
১.প্রতি মাসে বাবা মায়ের কাছে বড়জোর দুইদিনের জন্য
যেতে পারবে।অবশ্য অসুখ বা কোনও সমস্যা থাকলে
অারও বেশিদিন বাবার বাড়িতে থাকতে পারে,সমস্যা
নেই।
২.প্রতিদিন ফোনে বাবা মায়ের খোঁজখবর নিতে হবে।
৩.প্রতি মাসে তাকে নির্দিষ্ট কিছু টাকা দেওয়া
হবে,সেটা দিয়ে বাবা মায়ের জন্য এটা সেটা হাদিয়া
কিনে নিবে।
৪.বাবা মায়ের অসুস্থতার খবর শুনলে যত বড় সমস্যার
মাঝেই থাকুক ও,বাবা মায়ের কাছে গিয়ে খিদমত করতে
হবে।
৫.বাবা মাকে কখনও অসম্মান করে কিছু বলতে পারবেনা।
৬.প্রতিদিন তাদের জন্য দুঅা করতে হবে।
৭.উঁ....মনে পড়ছেনা অার।অাপাতত এগুলো থাক।এতটুকু
লিখে নিচে লিখ "এসব শর্ত অামি সজ্ঞানে মেনে
নিলাম।",তারপর নিচে ওর নাম লিখ,দুইপাশে সাক্ষীর
নাম হিসেবে অামার অার তোর নাম লিখ।
লিখা হলে খাতাটা বাড়িয়ে দিয়ে মা অামার সাক্ষর
নিলেন,শায়খের সাক্ষর নিলেন,নিজে সাক্ষর করলেন।
তারপর খাতা হতে পৃষ্ঠাটা ছিঁড়ে ভাজ করতে করতে
বললেন,
--শুনো মেয়ে,তুমি অাবার বলিও না অামার জন্য বাবা
মায়ের খিদমত করতে পারো নি।হাশরের দিন কিন্তু তুমি
অামাকে কোনওভাবে ফাঁসাতে পারবেনা।অাগে নিজের
জান্নাত ঠিক করো যাও,বাবা মায়ের খিদমত করো
অাগে,অামার খিদমত করার জন্য অামার পাঁচ ছেলেই
কাফি।
মায়ের কাজকর্ম দেখে শায়খ মিটিমিটি হাসছেন,অামার
চোখ ঝাপ্সা হয়ে অাসছিলো,মন চাচ্ছিলো গিয়ে মাকে
জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদি।কিন্তু কি একটা জড়তা কাজ
করছিলো কে জানে,অামি অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম।
মা সালাম দিয়ে চলে গেলেন।অামি তখনও ধাতস্থ হতে
পারছিলাম না।শায়খ পরম যত্নে অামায় কাছে টেনে
নিলেন।থুতনীটা একটু উঁচু করে ধরে বললেন,
--তোমার চোখে হটাৎ হটাৎ পানি কেন অাসে অাহলিয়া?
এখন তো তোমার খুশি হওয়া উচিৎ,এটা তো তোমারই
প্রচেষ্টার ফল।তুমিই তো....
--না না!এটা অামার প্রচেষ্টার ফল না।বরং এটা তো
অামার প্রতি অামার রব্বের করুণা,অালহামদুলিল্লাহ!
শায়খ জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,
--অাল্লাহু অাকবার!অামিনা!তুমি জানোনা অামি কত
সৌভাগ্যবান।অামার রব্ব শুধু অামায় চক্ষু শীতলকারী
স্ত্রী ই দেননি,বরং অামার পরিবারে রহমত ঢেলে
দিয়েছেন।মনে হয় একটুকরো জান্নাত দিয়েছেন অাল্লাহ
তোমায় দেওয়ার মাধ্যমে।অালহামদুলিল্লাহ!!সুম্ম
া অালহামদুলিল্লাহ!
অামি লজ্জা পেয়ে উনার বুকে মুখ লুকালাম।উনি নন,বরং
অামিই তো সৌভাগ্যবতী,যে কিনা এত পরহেজগার
কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।উনি অাচমকা
বলে উঠলেন,
--এই অামিনা,উঠো তো,খিদা পেয়েছে অামার।অামি
ভাত বাড়ি,তুমি গ্লাসে পানি ঢালো,দুটো খেঁজুর বের
করে নাও।তাড়াতাড়ি করো।
অামি মৃদু হেসে উঠে পড়লাম,এটা তো সেই প্রথম দিন
থেকেই রুটিন হয়ে গেছে।একদিন উনি ভাত বাড়বেন,অামি
গ্লাসে পানি ঢেলে খেঁজুর নিয়ে অাসবো,অারেকদিন
অামি ভাত বাড়বো,উনি গ্লাসে পানি ঢালা অার খেঁজুর
নিয়ে অাসার কাজ করবেন।খাওয়া শেষে একদিন অামি
প্লেট বাটি ধুবো,উনি বিছানা করবেন,অারেকদিন উনি
ধোয়ার কাজ করবেন,অামি বিছানা করবো।এখন অামরা
প্রায়ই একই প্লেটে খাই,একই গ্লাসের একই পাশে মুখ
লাগিয়ে পানি খাই।রসূলুল্লাহকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে তিনি সবসময়ই এগিয়ে।
ইনশাঅাল্লাহ চলবে.....
"শায়খ"
পর্ব বারো.....
--ওরে অাল্লাহ রে.......
এত্ত বড় সাপ কেন!
অামিনা!ও অামিনা!বের হও,বের না হলে দরজা খুলো......
খুলো না কেন?দরজা খুলো তাড়াতাড়ি,এত্ত বড় সাপ!!!
গোসলের জন্য গোসলখানায় গিয়েছিলাম,এক মিনিটের
মাথায় ই শায়খের চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি দরজা
খুললাম।দরজা খোলা মাত্র উনি তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে
ঢুকলেন।অামি তো ভয়ে চুপসে গেছি,অাসলেই কি সাপ?
--কি হলো?কোথায় সাপ?এত অশান্ত হয়ে অাছেন কেন?
--ইয়া অামিনা,অার বলিওনা,কত বড় সাপ।ওমাগো!অামি
দেখেই ভয় পেয়ে গেছি,তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম।
--সাপ!!কোথায়?দরজার ফাঁক দিয়ে যদি ওঘরে চলে যায়?
অাপনি সাপটাকে কিছু দিয়ে বাড়ি দিয়ে মেরে ফেলতে
পারলেন না?যদি কাউকে কামড় দেয়?
ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললাম অামি।
--না...অাসলে,
ওটা তো কাউকে কামড় দিতে পারবেনা।দরজার ফাঁক
দিয়ে কিভাবে বের হবে?ওটা তো নড়তে পারছে
না,কিন্তু কত বড় সা....
--নড়তে পারছে না?তার মানে অাপনি মেরে ফেলেছেন
সাপটাকে?অাপনি কি পাগল?জানেন না অনেক সময়
জ্বীনেরা সাপের রূপ ধারণ করে চলে অাসে।তাই সাপ
মারার অাগে তিনবার বলতে হয় জ্বীন হলে চলে যেতে!
এটা হাদিসে অাছে।এখন যদি কোনও সমস্যা হয়?উফফ.!
--না,অামিনা....
অাসলে অামি তো......
অামি তো সাপকে কিছু দিয়ে বাড়ি মারি নি।
কাঁচুমাচু হয়ে বললেন উনি।
--তাহলে?কি বলছেন এসব অাবল তাবল?সাপ দেখে মাথা
কাজ করছে না?অাপনি এত ভীতু!
--না না,অাগে তো কথাটা শুনবে তুমি।হটাৎ অামার ঘুম
ভেঙে গেলো,পাশে দেখি তুমি নেই।ওটা শুয়ে অাছে,তো
অামি....
--ওটা!!মানে সাপ?তার মানে ওটা জ্বীন ই
ছিলো,ইন্নালিল্লাহ.....
--এই,ওয়াশরুমে কেন বলছ এসব?গুনাহ হলে?
--অাপনি জ্বিনটাকে কেন মারলেন অাগে সেটা বলুন!
যদি গুনাহ হয়?কেন এ.....
--অারে অারে অাহলিয়া,শুনবে তো!
অামি সাপটাকে কিভাবে মারব বলো?সাপটা তো
দেখ,এই যে,এই....
উনি ফোন থেকে অামাকে একটা সাপের ছবি দেখালেন।
অন্য সময় হলে অামার মাঝে কেমন প্রতিক্রিয়া হতো কে
জানে,কিন্তু এই মুহূর্তে কপট রাগ নিয়ে অামি উনার
দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে অাছি।
উনি কয়েক সেকেন্ড অামার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ
নামিয়ে নিলেন।কাঁচুমাচু হয়ে বললেন,
--তুমি রাগ করেছ?অামি তো মিথ্যা বলিনি বলো।সত্যি
সত্যিই দেখো কত বড় সাপ,এটা দেখেই তো গলা শুকিয়ে
গেছে।তাই ভয়ে চলে এসেছি।অাসলে অামি...
--ভয়ে চলে এসেছেন?
--না না,ভয় কেন পাব?অামি কি ভীতু নাকি?হাহ!
অামি তো এসেছি, একটা সুন্নাহ পালন করতে।একই পাত্র
থেকে পানি নিয়ে গোসল করা সুন্নাহ তো।
--তো অামি বের হওয়ার পর অাপনি গোসল করলেও তো
একই পাত্র ই থাকতো,তাইনা? এত নাটক করে অাসার কি
দরকার ছিল?তাছাড়া এটাচ বাথরুম।অাসার সময় কোন পা
দিয়ে এসেছেন কে জানে?দুঅাও পড়েন নাই।
ভ্রু নাচিয়ে বললাম অামি।
--অাচ্ছা,দাঁড়াও বের হয়ে যাই....
বলেই প্রথমে ডান পা,পরে বাম পা দিয়ে উনি বের হয়ে,
"গুফরনাকা অালহামদুলিল্লাহিল্লাযী অাযহাবা
অান্নিল অাযা ওয়া অা'ফানি" পড়লেন।তারপর,
"বিসমিল্লাহি অাল্লাহুম্মা ইন্নি অাউযুবিকা মিনাল
খুবুছি,ওয়াল খবাইছ" পড়ে প্রথমে বাম পা,পরে ডান পা
দিয়ে প্রবেশ করলেন।
--এবার হয়েছে অাহলিয়া?
--অাপনি বের হয়েও অাবার এলেন কেন?
--না,ভাবলাম অারকি,এসেই যখন পরেছি গোসলটা করেই
যাই,
দাঁত কেলিয়ে হাসছেন উনি।অামার প্রচণ্ড হাসি পেলেও
অামি ভ্রু কুঁচকে রেখেছিলাম।অামার তাকানো দেখেই
সম্ভবত উনি ঢোক গিললেন।চোখগুলো নিচু করে মুখ
কালো করে,
--ঠিক অাছে,চলে যাই
বলে উনি পিছন ফিরে তাকালেন।এবার অামি হেসে
ফেললাম।হাসতে হাসতে এবার অামার চোখে পানি চলে
অাসার উপক্রম।কোথায় যেন পড়েছিলাম,হুজুররা অনেক
রোমান্টিক হয়,অাসলেই তাই।
…………………………………
…………………………………
…………………………………
তাহাজ্জুদের পর উনি অামার পড়া নিলেন,উস্তাযার কাছ
থেকে তাজউইদ সঠিকভাবে পড়ছি কিনা দেখলেন।তারপর
ফজর পড়ে অামার কোলে মাথা রেখে সূরা ইয়াসিনের
প্রথম দশ অায়াত অর্থসহ নিজেও মুখস্থ করলেন,অামাকেও
মুখে মুখে পড়িয়ে মুখস্থ করিয়ে নিলেন।
তারপর রুটিন মত ঘর ঝাড়ু দিয়ে অামায় নাস্তা বানাতে
সাহায্য করছিলেন,এমন সময়ে মায়ের চিৎকার
চেঁচামেচিতে অামরা চমকে ওই ঘরে যাই।
--দেখো রূপা,ভালোয় ভালোয় বলছি,অনেক চাকরি
করেছ,অার করার প্রয়োজন নেই।তুমি দেখছি অামার
ছেলেটাকে দাইয়্যুস বানিয়ে ছাড়বে।কাল রাতে এত
বোঝানো সত্ত্বেও তুমি এখন সেজেগুঁজে অফিস যাচ্ছ?
জানো মুখ ঢাকা ফরজ যে?তোমার এই সাজগোঁজের জন্য
কত ছেলের চোখের যিনাহ হতে পারে,জানো?!
--মুখ ঢাকা ফরজ!! এসব উদ্ভট কথা কোথায় পান অাপনি?এই
অামিনা মেয়েটার সাথে থেকে থেকে অাপনার মাথা
গেছে বুঝলেন?অাপনার ছেলে নিজে তো জঙ্গি,মেয়ে
একটাকে কোথা থেকে খুঁজে এনেছে,সে অারেক
জঙ্গি,অসামাজিক একটা মেয়ে।এখন তারা অাপনার
মাথা খাচ্ছে।
--মাথা খাচ্ছে না বরং ওরা অামাকে সিরাতুল
মুস্তাক্বিম চেনাচ্ছে।মুখ ঢাকা ফরজ বুঝেছ?এটা
কুরঅানে অাছে।অামিনা,সেদিন না তালিমে এটা
বলেছিল।তুমি একটু বলো তো রূপাকে।কুরঅানে কোথায়
কোথায় মুখ ঢাকা ফরজ যে এটা অাছে?
অামি কাঁচুমাচু হয়ে বললাম,
--অাপা,সূরা অাহযাবে.....
--শাট অাপ ইউ ইলিটারেট গার্ল।কয়বার বলব অামাকে
অাপা না বলতে?অার সূরা ক্বিরাত কি অামাকে তোমার
কাছ থেকে শেখা লাগবে নাকি?লিসেন,অামি যথেষ্ট
জানি ইসলাম নিয়ে,অার সেটা মানি ও।তুমি নিজের
চরকায় তেল দাও,বুঝেছ?কোথা থেকে তুলে এনেছে কে
জানে?ম্যানার বলতে কিছু নেই এই মেয়ের মাঝে।অারে
এর চেয়ে তো পাশের বাড়ির.....
ঠাশ!!
হটাৎ কি হলো কে জানে!অামার শ্বাশুড়ি মা বড় জায়ের
মুখে চড় মেরে দিলেন।এতক্ষণ শায়খ চোখ নিচু করে
ছিলেন,এই প্রথম চোখ তুলে তাকালেন।ঘটনা বুঝেই
অামার শায়খ তড়িঘড়ি করে এসে মাকে সামলালেন।
চেয়ারে বসিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে খাওয়ালেন।বড় জা
কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন।পরে রাগত স্বরে
মাকে এসে বললেন,
--অাপনি হয়ত ভুলে গেছেন দেশে অাইন অাছে।অামি
অাজকেই গৃহবধূ নির্যাতনের জন্য মামলা দায়ের করব।
অামার জীবন,অামি কিভাবে কাটাবো অামার ইচ্ছা!
অাপনি বলার কে?
কদিন অাগেও তো শবে বরাত শবে কদর ছাড়া নামায
পড়তেন না।এখন খুবই সূফী সাজছেন দেখি!অবশ্য এখন তো
বয়স হয়েছে তাইনা?এক পা কবরে,অারেক পা
মাটিতে,তাই এত ধর্মকর্ম করছেন।অামার সময় হলে
অামিও করব,অাপনাদের শিখিয়ে দেওয়া লাগবে না।
অার এই মিডল ক্লাস মেয়েটার জন্য অামার গায়ে হাত
তুললেন না?এর বদলা তো অামি নিব ই।মনে
রাখবেন,সংসারের অর্ধেক খরচ কিন্তু অামার অার
অাপনার বড় ছেলের পকেট থেকেই অাসে।
বলে গটগট করে হেঁটে চলে গেলেন তিনি।
অামার শায়খ মাকে তেলে বেগুণে জ্বলে উঠতে দেখে
সবর করতে বললেন।বলতে থাকলেন,
--মা,তুমি উনার মুখে অাঘাত করলে কেন?এটা গুনাহ না?
--রাগে করছি,বেটা,রাগে করছি।এখন কি করতে হবে বল?
ওর পা ধরে মাফ চাইবো?
--এখনও রেগে অাছ তুমি?মা!
জানো হাদিসে কি এসেছে?প্রকৃত বীরপুরুষ সে,যে
রাগের সময় নিজেকে কন্ট্রোল করে।
--ওখানে পুরুষের কথা বলছে,অামি পুরুষ না।
মায়ের কথায় ফিক করে হেসে দিলেন উনি।মায়ের হাত
জড়িয়ে বললেন,
--তুমি হলে বীর নারী, বুঝলে?এখন শুনো,ভাবির গায়ে হাত
তুললে কেন?
--ও তোর বউয়ের সাথে এভাবে কথা বলছিল কেন?
--তাতে কি হয়েছে?অামিনাকে তো তুমি ভালবাসো
না,ছেলের বউ হিসেবে মানো না,তুমিই তো বলেছিলে।
তাহলে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করলে কি এমন হবে?
--থাপ্পড় কি এখন তুই খাবি?কখন কি বলেছি এখনও সেসব
নিয়ে পড়ে অাছিস কেন?এই মেয়ে,এদিকে এসো,কোন
কোন সূরায় মুখ ঢাকা নিয়ে বলেছে অামার বেটা সেগুলো
বলবে,তুমি খাতা কলম নাও।তাড়াতাড়ি করো,লিখো
এবার।
--
১.সূরা অাহযাবের ৫৯ নং অায়াতে অাছে,
"হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে,কন্যা
গণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে
বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ
নিজদের উপর টেনে দেয়,এতে তাদের
চেনা সহজ হবে,ফলে তাদের উত্যক্ত করা
হবে না,আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু!"
এই আয়াতে স্পষ্ট ভাবে চেহারার পর্দার
কথা বলা হয়েছে,
'চাদরের কিয়দাংশ নিজের উপর টেনে
দেয়'
বাক্যটিই প্রমান করে এখানে
গায়ের চাদরের কিছু অংশ মুখের উপর
টেনে দেয়ার কথা বলা হয়েছে......
২.সূরা অান নূরের ৩১ নং অায়াতে অাছে,
".... তারা যেন যা সাধারনত প্রকাশ্যমান
তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না
করে..."
এই আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করে অনেকে মুখ
খোলা রাখার ব্যাপারে যুক্তি
দেখান,কারন এখানে বলা হয়েছে যা
সাধারনত প্রকাশমান!
সুতরাং তারা চেহারা কে প্রকাশ্য বস্তু
ধরে নিয়েছে!
অথচ যা দৃশ্যত প্রকাশমান বলতে নারীর
দৈর্ঘ ও খর্বতা,কৃশতা ও স্থুলতা,বাতাসের
দোলে বোরকার নিচের পোশাক বা
দেহের কোন অংশ দেখা যাওয়া কে
বুঝানো হয়েছে,
অর্থাৎ নারীর সৌন্দর্যের কোন কিছু অনিচ্ছায়
প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি পর্দার হুকুম থেকে বিযোজ্য।
সেজন্যই উক্ত আয়াতে আল্লাহ 'নারী
নিজে যা প্রকাশ করে' কথাটি বলেননি।বলেছেন, যে
সৌন্দর্য নারীর স্বেচ্ছা
সম্পাদন ব্যতীত এমনিতেই প্রকাশিত হয়ে যায়।
সুতরাং হাত,মুখ,পা এগুলোও পর্দার
অন্তর্ভুক্ত..
৩.সূরা নূরের ৩০ নং অায়াতে অাছে,
"মুমিনদের বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি কে
নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাযত
করে,এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা
আছে,নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা
অবহিত আছেন।"
প্রতিটি বিবেকবান ব্যক্তিই বুঝবে এই আয়াতে কি
বুঝানো হয়েছে..
নারীর চেহারা পর্দামুক্ত রাখার অর্থই হল তারা যেন
পুরুষদেরকে তাদের দেখার
প্রতি আমন্ত্রন জানাচ্ছে।
৪.সূরা নূরের ৩১ নং অায়াতে অাছে,
"ঈমানদার নারীদের বলুন,তারা যেন
তাদের দৃষ্টি কে নত রাখে এবং তাদের
লজ্জাস্থানের হিফাযত করে,এবং
সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।"
প্রথমে পুরুষদের দৃষ্টি নত রাখতে বলা হয়েছে,পরবর্তী
আয়াতেই নারীর সৌন্দর্য
প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে...
মানে কি দাঁড়াল?
আপনি সৌন্দর্য প্রদর্শন করলে পুরুষ রা তাকাবেই,তাই
নারীর পর্দা পুরুষদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনত রাখতে
সাহায্য করবে...
৫.এবং সূরা নূরে অারও অাছে,
"তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা
প্রকাশের জন্য জোরে পদচারণা না করে।"
নারীর জন্য পায়েল বা নুপুরের শব্দ নিয়ে ঘর থেকে বের
হওয়া হারাম, নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ পুরুষের মনে
ফিতনার উদ্রেগ ঘটাতে পারে, নারীর জন্য যেহেতু শব্দ
তোলে এমন কিছু
পরিধান করার বৈধতা টুকুও নেই,
তাহলে চেহারা খোলা রাখা বৈধ হয় কিভাবে?
৬.সূরা অাহযাবের ৩৩ নং অায়াতে অাছে,
"তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান
করবে,মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে
প্রদর্শন করবেনা....."
যদিও জাহিলী যুগের নারীরা অধুনা বিশ্বের নারীদের
মত বাহু,কাঁধ,বক্ষ, পিঠ,উরু উন্মুক্ত করে চলত না,
তারা কেবল চেহারা খোলা রাখত,বড়জোর চুল বের করে
চলত।
তদুপরি অজ্ঞতার যুগের অধিকাংশ নারীই চেহারা
পর্দাবৃত রাখত,সেকালের কাব্য সাহিত্য থেকে এমনটিই
জানা যায়।
এরপরও আল্লাহ ইরশাদ করেন 'অজ্ঞতা
যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না'।
৭.সূরা অাহযাবের ৫৩ নং অায়াতে অাছে,
"তোমরা তার (নবী) পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার
আড়াল থেকে চাইবে,
এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য
অধিকতর পবিত্রতার কারন!"
(সূরা আহযাবঃ৫৩)
আয়াত টি চেহারার পর্দার আবশ্যিকতার ব্যাপারে
সুস্পষ্ট দলিল।
এখানে নবী পত্নীদের সম্মোধন করা হলেও তা উম্মতের
জন্য ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য.......
.
লিখা শেষ করে খাতাটা বাড়িয়ে দিলাম মাকে।মা
হটাৎই শায়খকে বলে উঠলেন,
--বেটা,অামায় এক জোড়া হাত মোজা অার এক জোড়া
পায়ের মোজা এনে দিবি বেতন পেলে?
অামার শায়খ চমকে মায়ের দিকে তাকালেন।অামি
জানি অামার শায়খ এখন কেঁদে ফেলবেন।মায়ের এমন
বদলে যাওয়া রূপ তো তিনি অাগে দেখেন নি।
ইনশাআল্লাহ চলবে........
"শায়খ"
পর্ব তেরো.......
মা বড় ভাইকে পুরোদমে চাপ দিচ্ছেন বড় জায়ের জন্য
অালাদা বাড়ির ব্যবস্থা করতে,পাশাপাশি চাকরি
ছাড়াতে।বড় ভাইয়া অার জা মানতে নারাজ।প্রতিনিয়ত
তুমুল ঝগড়াঝাঁটি,এক পর্যায়ে বড় ভাইয়া অাপাকে নিয়ে
অালাদা হয়ে গেছে।মা এখন অামাদের সাথেই থাকে।
এক দেওরের বিয়ের কথা চলছে এখন।অাগের মা অার
এখনকার মায়ের মাঝে বিস্তর পার্থক্য।মা কেবলমাত্র
পর্দানশীন মেয়ে খুঁজছেন।অন্যদিকে দেওরের পছন্দ করা
জাহেলিয়াতে ডুবন্ত একজন মেয়ে অাছে,সামিয়া।দেও
রের সাথেও কথা কাটাকাটি হতে থাকলো মায়ের।
সেদিন হুট করেই অামায় জিজ্ঞাসা করলেন,
--সামিয়ার সাথে অামার ছেলেটার বিয়ে দিয়ে যদি
মেয়েটাকে প্রতিদিন দাওয়াত দিই,তাহলে কি
মেয়েটাও তোমার মত হয়ে যাবে?
--মা,হিদায়াত অাল্লাহর তরফ থেকে অাসে।অামরা শুধু
চেষ্টা করতে পারি।তবে অামার মনে হয়,ওদের বিয়েটা
না দিলে অবিচার হবে।
--কেন?অামার ছেলের জন্য একজন ধার্মিক মেয়ে অামি
খুঁজতেই পারি।অামার কি অতটুকুও অধিকার নেই?
--ভূল বুঝবেন না মা।অধিকার অবশ্যই অাছে।তবে ওর
বিয়ের ব্যাপারে ও বেশী হক্বদার।ওর পূর্ণ অধিকার
অাছে পছন্দমত বিয়ে করার।তাছাড়া ওদের এতদিনের
সম্পর্ক,বিয়ে না হলে ওদের মনের যিনাহ হতে পারে
মা,এবং এটা চলতেও পারে....
--কিন্তু মেয়ে তো জাহেল।
--ছেলেও তো জাহেল।
--ঠিক বলছো।তবুও....
অাচ্ছা,কয়েকটা শর্ত দিই ওদেরকে?যেমন কম
দেনমোহর,মাসজিদে বিয়ে,পর্দার সুব্যবস্থা.....
এগুলো।তারপর অাস্তে অাস্তে অামরা ঠিক করে নিব,কি
বলো?
--হ্যাঁ অাম্মা এটা করতে পারেন।
শাশুড়ি মা দেওর অার সামিয়াকে শর্তগুলোর কথা
বললেন।অনেক অালাপচারিতার পর সিদ্ধান্ত হলো মোহর
কমপক্ষে এক লাখ টাকা হবে,অার ঘরোয়াভাবে বিয়ে
হবে।
বিয়েটা হয়ে গেলো।মা অামার ছোট জাকে প্রতিনিয়ত
দাওয়াত দিচ্ছিলেন।এক প্রকার জোর করেই নামায
পড়াতেন,তালিমে নিয়ে যেতেন।সামিয়া নামাযটা
রেগুলার পড়লেও অন্যান্য অানুসাঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে
সচেতন না।তালিমের অান্টিটা মায়ের অনুরোধে
প্রতিদিন এখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু অালাইহি ওয়া
সাল্লাম অার অাম্মাজানদের মাঝের সম্পর্ক নিয়ে
অালোচনা করেন।সংসার জীবন কিভাবে ছোট্ট একটা
জান্নাতে পরিণত করা যায়,সেসব নিয়ে অালোচনা
করছেন।সামিয়া একটু একটু ইন্সপায়ার হচ্ছে বোঝা যায়।
পাশাপাশি অামি বুঝতে পারলাম অামার মাঝে অন্য
কারও অস্তিত্ব।লজ্জায় একাকার হয়ে যাচ্ছি। সম্ভবত
নিজের মাঝে ছোট্ট কারও অনুভূতির চাইতে অসম্ভব
ভালোলাগার অার কোনও অনুভূতি পৃথিবীতে অাছে বলে
মনে হয়না।শায়খকে যখন জানালাম,চিৎকার করে
তাকবির দিয়ে সাজদায় পড়ে গেলেন।অশ্রু ধোয়া মুখ,অথচ
মুখে চওড়া হাসি,অামি অাবারও উনার প্রেমে পরে
গেলাম।শাশুড়ি মা তো কাঁথা সেলাই করতেই ব্যস্ত।
অামিও কম যাই নাকি,ফেসবুকে পড়েছি এই সময় কুরঅান
খতম দিলে সন্তান জান্নাতি হয়,কোন মাসে কি সূরা
পড়ব সব,নোট করে রেখেছি।একদিন হটাৎই শায়খ নোটবুক
দেখে বললেন,এসব নাকি বানোয়াট।সহীহ হাদিসে এই
সময়কার এসব অামলের কথা নেই।কি অদ্ভুত!মানুষ জাল
হাদিস ও বানায়!!!!
প্রতি মাসে মাসে চেকাপ চললেও অামার কেবল ভয় হতো
সব ঠিকঠাক থাকবে তো?অামি ওই ছোট্ট হাতপা গুলোকে
ছুঁয়ে ছুঁয়ে অাদর করতে পারব তো?অাসলে এই অনুভূতিটা
কেমন যেন,ভয়,সাবধানতা
,অানন্দ,ব্যাথা,সব একসাথে......
দিন যতই কাছে অাসছে,স্বলাত অাদায় করতে অামার
ততই কষ্ট হচ্ছে।তারপরও ধৈর্য ধরে স্বলাত পরতাম।কোথা
থেকে শাশুড়ি মা মারয়াম ফুল এনে জমা করলেন।শায়খ
মাকে বুঝিয়ে বললেন,এই ফুলের উপর নির্ভরতার কারণে
শিরকী গুনাহও হয়ে যেতে পারে।
দিন ঘনিয়ে অাসছিলো অার অামার শায়খের অস্থিরতা
বাড়ছিল।এক পর্যায়ে অামার ব্যাথা শুরু হলো,উনি
পাগলপ্রায় হয়ে অামায় মেডিকেলে নিয়ে গেলেন।
সিজারিয়ান ডেলিভারি কোনও ভাবেই হতে দিবেন না
জানিয় রেখেছেন ডাক্তার অাপুকে।সম্পূর্ণ সময় অামার
হাত ধরে অামার সাথে থাকার জন্য প্রচুর জেদ
করেছিলেন তিনি।কিন্তু রুলসের বাইরে হওয়ায় পারেন
নি।পুরোটা সময় কেমন গিয়েছিল,তা লিখে প্রকাশ করা
যাবেনা।একদিকে ডাক্তার অাপার ভয়ার্ত কণ্ঠে "পুশ
অামিনা,পুশ" অাদেশ,অন্যদিকে চূড়ান্ত কষ্ট।
হটাৎই কান্নার শব্দ........
এতটা কষ্টের পর এই অল্প একটুখানি কান্না শোনার
অনুভূতি বর্ণনা করার সাধ্য পৃথিবীর কোনও কবি-
সাহিত্যিকের নেই,থাকা সম্ভব না।
ইনশাআল্লাহ চলবে.....
"শায়খ"
পর্ব চৌদ্দ....
ছোট্ট একটা বাবু......
অামার সামনে যখন বাবুটাকে অানা হলো তখন প্রায়
ত্রিশ মিনিট পার হয়ে গেছে।এতক্ষণ ঠিক কি হয়েছে তা
অামার মনে নেই।ছোট্ট বাবুটাকে দেখার পর কি করা
উচিৎ তাও বুঝতে পারছিনা।কোনও মতে বুকে জড়িয়ে
কেঁদে ফেললাম।
মন ভরে দেখছিলাম অামার ছোট্ট সোনামনি টাকে।
ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা,কি ছোট্ট দুটো চোখ,চুলগুলো কি
সুন্দর,কি মায়া.....
মাশাঅাল্লাহ!মাশাঅাল্লাহ!
উফফ!এত ছোট্ট বাবুটা অামার,অামি ই বাবুটার মা।
এতগুলো দিন ধরে একটু একটু করে বেড়ে উঠেছিলো
অামার মাঝে.....
অামার কান্না থামছিলো না।বিয়ের দিন যখন কবুল
বলেছিলাম,তখন ভেবেছিলাম বিয়ের চেয়ে সুন্দর মুহূর্ত
অার নেই।যখন প্রথম প্রথম ফিল করতাম অামার মাঝে,তখন
ভেবেছিলাম মা হওয়ার চাইতে সুন্দর অনুভূতি অার নেই।
কিন্তু যখন বাবুটাকে হাতে নিলাম,বুঝতে পারলাম
অাসলে সবচাইতে সুন্দর,সবচাইতে অানন্দদায়ক মুহূর্ত কি
হতে পারে।বাবুটা কাঁদছে,অার অামার মনে হচ্ছে,সে
যেন অামাকে 'মা,মা' বলে ডাকছে।অামি পাগলের মতন
চুমু খেলাম,ওর হাতগুলো,পা,মুখে,সারা শরীরে হাত
বুলিয়ে দিলাম,জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ফেললাম
অাবারও।
অামার রব্ব কত দয়ালু,অামার মহামহিম রব্বের কত
করূণা,অামায় এই ছোট্ট বাবুটা উপহার দিয়েছেন তিনি।
কৃতজ্ঞতায় চোখ অারও ভারী হয়ে উঠছিলো,অামি
বিড়বিড় করে পড়লাম,অালহামদুলিল্লাহ।
শায়খ অামার পাশে বসা।অামার মাথায় হাত বুলিয়ে খুব
স্নেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
--কষ্ট হচ্ছে অাহলিয়া?
অামি মাথা নেড়ে উত্তর দিলাম,হচ্ছে না।
--জানো,বাবুকে খেঁজুর খওয়ানোর সময় যা তুলকালাম
কাণ্ড হলো,ডাক্তার অাপা কিছুতেই বাবুকে খেঁজুর
খাওয়াতে দিবেন না।অথচ চিন্তা করো, খেজুর দিয়ে
তাহনিক করা সুন্নত।
--তাহনিক মানে?
--তাহনিক বলতে,খেঁজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখের
তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা এবং তার মুখ খুলে
দেয়া যাতে তার পেটে এর কিছু অংশ প্রবেশ করে।
--কিন্তু অামি তো শুনেছি এটা মুস্তাহাব।
--হ্যাঁ,ঠিকই শুনেছ।সকল অালেম একমত হয়েছেন,এটা
মুস্তাহাব।কিন্তু রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু অালাইহি ওয়া
সাল্লাম যেহেতু এটা করেছেন,এবং তার সব কাজকেই
সুন্নাহ বলা হয়,তাই তাহনিক করাকেও সুন্নাহ বলা
যায়,বুঝলে?
--হু,বুঝলাম।তো পরে বাবুকে তাহনিক করিয়েছ?অার
কানে অাযান দিয়েছ?
--হ্যাঁ করেছি।ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত
দিয়েছি মৃদু আওয়াজে......
এখন এত কথা না বলে বাবুকে খাইয়ে দাও তো।তোমারও
নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে?কত বেলা হলো দেখেছ?
--অাপনি খেয়েছেন?
--জ্বি না,অামার অাহলিয়া এমন পরিস্থিতির মাঝে,অার
অামি খেয়ে বসে থাকব,এমন কঠিন হৃদয় অামার নেই।
অামি বাবুটাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলাম,হুট করে
শায়খ এসে অামার কপালে চুমু খেলেন।উনার চোখে
অশ্রু,মুখে প্রশস্ত হাসি...................
হাসপাতাল থেকে পরদিনই চলে এলাম।অামার ছোট জা
এক প্রকার জোর করেই অামার বালিশের নিচে রসুনের
কোয়া,দেশলাইকাঠি,লোহার টুকরা রাখা শুরু করলো।
অামি কিছুই না বুঝে জিজ্ঞেস করলাম,
--এসব কেন সামিয়া?
--অাপা,অাপনি জানেন না,এই সময় শয়তান অাসে বাবুকে
নিয়ে যেতে,এসব রাখলে শয়তান অার অাসার সুযোগ
পায়না।
--কে বললো শায়ত্বান অাসে?অার অাসলেও কি?
প্রতিদিন অায়াতুল কুরসি পড়ে দিবে,বাবুর কাছে এসে
কুরঅান শরীফ পড়বে,তাহলেই হবে ইনশাআল্লাহ।এসব কিছু
কুসংস্কার,বুঝেছ?
--কিন্তু সবাই তো এসব মানে....
--এসব তো কুরঅান-হাদিসে নেই সাইমা।তাই এসব বর্জন
করতে হবে,বুঝেছ?তাছাড়
া এসবের কোনও ভিত্তিও নেই।
--তাহলে কি এসব সরিয়ে ফেলব?ইয়া অাল্লাহ!কি
করেছেন অাপা?কপালে একটা টিপ দিবেন না?জানেন
না সবাই নজর দেয়?দাঁড়ান অামি কাজল অানি।সবসময়
কাজল দিয়ে বা কপালে টিপ দিয়ে রাখবেন।
--দাঁড়াও সামিয়া,
বলে হাত ধরে টেনে বসালাম ওকে।
এটাও কুসংস্কার।টিপ থাকলে কারও বদনজর
লাগবেনা,এমন বিশ্বাস করলে সেটা শিরক হয়ে যেতে
পারে,বুঝেছ?
--তাহলে সবাই যে লাগায়?
--কি জানি কেন লাগায়,তবে অামরা কালো টিপ দিবো
না বাবুর কপালে,কেমন?
--তাহলে যদি নজর লাগে?কি করব?সেদিন না তালিমের
অান্টিটা বলেছেন,বদনজর কাউকে কবর পর্যন্তও নিয়ে
যায়!যদি বাবুর উপর কারও নজর লাগে?
--তাহলে রুকইয়াহ করে নিব।রুকইয়াহ অাছে না?শরীয়ত
সম্মত ঝাঁড়ফুক!
--কিন্তু সেটা তো নজর লাগার পর,নজর যাতে না লাগে
তার জন্য কিছু করা যায় না?
--হু যায় তো।একটা হাদিসে এসেছে এমন,
রসূলুল্লাহ হাসান রাযি. ও হুসাইন রাযি.-এর জন্য এই দোয়া
পড়ে আল্লাহতায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
ﺃُﻋِﻴْﺬُﻛُﻤَﺎ ﺑِﻜَﻠِﻤَﺎﺕِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻴْﻄَﺎﻥٍ ﻭَّﻫَﺎﻣَّﺔٍ ﻭَّﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻋَﻴْﻦٍ ﻻَﻣَّﺔٍ
অর্থাৎ সকল শয়তান, কীটপতঙ্গ ও বদনজর হতে
তোমাদেরকে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে
দিচ্ছি।
দোয়াটি এক সন্তানের জন্য পড়লে ‘উয়িযুকা’, দুইজনের
জন্য ‘উয়িযুকুমা’ আর দুইয়ের অধিক হলে ‘উয়িযুকুম’ বলতে
হবে।
এর সঙ্গে আয়াতুল কুরসি, তিন কুল ও হাদিসের অন্যান্য
দোয়া তো আছেই।
--তাহলে অামিও প্রতিদিন দুঅাটা পড়ে দিব কেমন?
অার অাক্বিকা কবে দিবেন অাপা?
--সাতদিন হলেই ইনশাআল্লাহ।
--নাম ঠিক করছেন বাবুর?নাকি সেদিনই রাখবেন?
অামি কিচ্ছু বলিনি অার,মুচকি হেসে বাবুটাকে বুকে
জড়িয়ে নিয়েছি।
বাবুটা শান্ত হয়ে অাছে।অামার ছোট্ট সোনাটার নাম
তো অামি সেই কিশোরী থাকার সময় থেকেই ঠিক করে
নিয়েছি।
মুহাম্মাদ,অামার মুহাম্মাদ.............
ইনশাআল্লাহ চলবে....
No comments:
Post a Comment