কিছুদিন আগে এক দ্বীনি আপুর পোষ্ট চোখে পড়লো।
মাশাআল্লাহ উনি ফেইসবুকে দ্বীনের পথে দাওয়াতের কাজে
নিয়োজিত।
অনেক ভালো লাগে উনার পোষ্টগুলা পড়তে।
শিক্ষণীয় অনেক বিষয় থাকে উনার লিখাগুলাতে।
তো একদিন পর্দা নিয়ে একটা পোষ্ট করলেন,,,লিখার এক
পর্যায়ে উনি শেষের দিকে এই কথাগুলা লিখে শেষ করলেন,
"সবচেয়ে বড় কথা হলো ছেলেদের সাথে ফেবুতে চ্যাটিং
করা বা আলাপ করা হারাম হারাম হারাম,,,আর সেটা হোক চাচাতো
ভাই,,মামাতো ভাই, ফুফাতো ভাই,,
নাম মাত্র ভাই, বা জাস্ট ফ্রেন্ড বিশেষ কোন কাজ ছাড়া চ্যাটে
অযথা কথা বলা এটা সম্পূর্ণ হারাম। আর এতে জিনাহ হয়,,,আর যিনা
কারীর শাস্তি কতটা ভয়ংকর হয় তা তো জানেনই"।
শেষের এই কথাগুলা দেখে কয়েক মিনিট স্তব্ধ ছিলাম,,,
আমি জানতাম না তা নয়,,জানতাম কিন্তু শয়তানের ধোকায় মাঝে
মাঝে পড়তে হতো।
তো এই পোষ্টটা দেখার পর নিজে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
হলাম,,,নাহ আর যাইহোক আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার।
তারপর হঠাৎ করেই আপুটার কমেন্টের দিকে চোখ গেলো।
কমেন্টগুলা দেখে আমার চোখ চড়কগাছ।
আপুটা যেই কথাগুলা লিখছে সেটা সঠিকই,,,। কিন্তু আপুটা লিখছে
ঠিকই কিন্তু কমেন্টে অধিকাংশ ভাইয়াদের লিখা দেখতে
পেলাম,,,আমি কিছুটা অবাক কারণ আপুটাও গড়গড় করে ভাইয়াদের
সাথেও কমেন্টে কথা বলছে।
যেই মানুষটা মাত্র এটাকে হারাম বলে পোষ্ট করলো,,সেই
নিজেই আবার হারাম কাজ করতাছে……।
বোনেরা আমি কথাগুলা এমনি এমনি বলছিনা আমি আপনাদের কিছু
জরুরী জিনিস বলার জন্য প্রসঙ্গটা তুললাম।
……হ্যাঁ ফেইসবুকে অন্য নারীদের বা পুরুষদের সাথে কথা বলা
হারাম,,তা আমি হাদিসের বই পড়েই জেনেছি।
কিন্তু আমি এ নিয়ে কখনোই পোষ্ট করিনি,,,অনেক দ্বীনের
দাওয়াত দেই,, কিন্তু এ বিষয়টি আমি লিখিনি।
কারণ কোথাও না কোথাও আমি তখনো শয়তানের ধোকায়
পড়ে ছিলাম।
বোনেরা আমার যে বিষয়টি নিজে মানতে পারবেন না,,নিজে
সে রকমভাবে চলতে পারবেন না,,সে বিষয়ে উপদেশ না
দেওয়াই উত্তম।
……দ্বীনের যে বিষয় নিয়ে দাওয়াত দিবেন তা আগে নিজের
মধ্যে নিয়ে আসুন।
এই ধরুন পর্দার দাওয়াত দিচ্ছেন,,,আগে সেটা নিজে করুন,, তারপর
অন্যদের উপদেশ দিন।
……নিজের মধ্যে দ্বীনদারিত্বটা না এনে মানুষদের উপদেশ
দিবেন না।
…আপনি আগে নিজেকে পরিবর্তন করুন,,,তারপর অন্যকে
পরিবর্তন করতে যান।
…ফেইসবুকে অনেক দ্বীনি বোনদের দেখা যায়,,কিন্তু
বাস্তব জীবনে হাতে গুনা কয়েজন তা আমার চোখে
দেখা,,,মেয়েটি ফেইসবুকে অনেক ইসলামি পোষ্ট
করে,,আইডি দেখে বুঝা যায় সে অনেক ইসলামি
মাইন্ডের,,,কিন্তু আসলে কি তাই...? বোনেরা ভারচুয়াল লাইফে
নিজের দ্বীনদারিত্বটা দেখানোর জায়গা নয়,, বাস্তব জীবনে
নিজেকে দ্বীনদার করে তোলাই হলো আসল।
…বোনটি দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু সে নিজেই
মেনে চলতে পারছে না।
,,তাহলে অন্যকে মানাবেন কি করে,,।
বোনেরা আবারও বলছি যেটা আপনি মানতে পারবেন তা
অন্যকে উপদেশ দিতে যাবেন না,,,কারণ এতে আল্লাহ
অসন্তুষ্ট হন।
..আগে নিজেকে পরীক্ষা করুন,,,।
ধরুন আপনি পর্দা করা শুরু করছে,,,মাহরাম/গায়রে মাহরামদের
মেইন্টেন করে চলছেন……।
শুরুতেই আপনি এই বিষয় নিয়ে কাউকে দাওয়াত দিতে যাবেন
না,,,১-২ মাস নিজেকে নিজেই পরীক্ষা করুন,, আপনি এই পথে
চলতে পারছেন কি না..?
যখন দেখবেন কিছুটা হলেও আপনি পারছেন তখন দাওয়াত দিতে
শুরু করুন।
যেমন: বোনটি বলছেন ঠিকই ফেইসবুকে আলাপ হারাম,,কিন্তু
নিজে তা মেনে চলছে না,,,বোনটিকে আমি অবশ্যই
বলবো,,আগে নিজেকে পরিবর্তন করুন,,নিজেই নিজেকে
পরীক্ষা করুন আপনি গায়রে মাহরামদের সাথে কথা না বলে
থাকতে পারছেন।
তারপর আপনি এই বিষয়ে দাওয়াত দিন।
…হারাম কাজে আল্লাহ সত্যিই অসন্তুষ্ট হন……।
তাই হারাম থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইন শা
আল্লাহ আমার রব একসময় সব সহজ করে দিবেন।
..এই বিষয় যখন পুরোপুরিভাবে কনফার্ম হই,,তখন থেকেই
কাউকে ভালো খারাপ জিজ্ঞেস করতেও বিবেকে নাড়া
দেয়,,আমার আল্লাহ অসন্তুষ্ট হচ্ছেন না তো……?
কারো কথার উত্তর দিতেও আমার রুচিতে বাধে।
……অনেকেই আমাকে এতে অহংকারী ভাবতে পারে।
কিন্তু আমার আল্লাহ জানেন আমি কি,,,উনার হুকুম পালন করতে
গিয়ে যদি এইরকম হয়ে যাই তাহলে আমার কোন যায় আসে
না……।
আমি তো আমার রবের সন্তুষ্টির জন্যই সব করছি।
আমার bio দেখার পর সুস্থ মস্তিষ্কের ভাইয়ারা এড বা মেসেজ
করতে দু বার ভাববে।
।
আমি নিজেকে নিদোর্ষ বলি না। কেননা মানুষের মন তো মন্দ
কাজেরই প্ররোচনা দিয়ে থাকে। তবে সে নয়, যার প্রতি আমার
রব দয়া করেন। নিশ্চয়ই আমার রব পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা ইউসুফ-৫৩)
মন যেটা চায় সেটা করা যাবে না,,আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মনের
সাথে যুদ্ধ করুন,,কারণ প্রতিনিয়ত শয়তান আমাদের ধোকা দেওয়ার
চেষ্টা চালায়।
চোখ যেটা চায়,,সেটা দেখা থেকে বিরত থাকুন আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য……।
★
আমি আবার একই কথাই বলবো,,,,
#আগে নিজেকে পরিবর্তন করুন,,,শুধু ফেসবুকে কিছু ইসলামি
পোষ্ট করেই আপনি দ্বীনদার হয়ে গেলেন সেটা ভুলেও
ভাববেন না,,।
একজন প্রকৃত দ্বীনদারের পরিচয় ফেইসবুকে নয় বাস্তবে
হওয়া চাই……।
সদ্য দ্বীনে ঢুকা মানুষদের শয়তান বেশিই কুমন্ত্রণা দেয়,,,
তাই আগে শয়তানের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হোন,,,দিনের
শুরুটা থেকেই শয়তানকে হারিয়ে দিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট
করুন।
★
ফেসবুকে চ্যাট আলাপ হারাম সেটা জানার পর আগে নিজে হারাম
থেকে বেরিয়ে অন্যকে দাওয়াত দিন...।
নিজে নিজেকে পরীক্ষা করুন।
★
এই হারাম পথ ছাড়তে ঈমানী শক্তিও থাকা প্রয়োজন।
নিজেকে একটু পরখ করে দেখি,,,#ইনশাআল্লাহ আল্লাহ যদি
সহায় হোন তাহলে এই বিষয়ের উপর আমিও কিছু পোষ্ট
করবো।
আবার একই কথা রইলো……
# অন্যকে_উপদেশ_দেয়া_খুব_সহজ …… কিন্তু সেটা নিজের
জীবনে বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন । ভালো-ভালো কাজের
উপদেশক অনেক কিন্তু এগুলো মান্যকারীর সংখ্যা খুবই কম ।
।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনুল_কারীমে বলেছন,,
"মুমিনগণ ! তোমরা যা কর না,তা কেন বল? তোমার যা কর না, তা বলা
আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তুষ্টজনক "।
(সুরা আছ-ছফ,আঃ২-৩)
তাই আমাদের উচিৎ আমরা অন্যকে যা, বলি তা নিজেদের
জীবনে বাস্তবায়ন করা।
#হে আল্লাহ ! আমাদেরকে সত্য কথা শুনার তৌফিক দান করুন । এবং
প্রতিদিন পবিত্র কোরআন এবং হাদিস থেকে যে কথাগুলো শুনছি,
সেগুলোর উপর আমল করার মত তৌফিক দান করুন।
#
আস সালামু আলাইকুম।
ReplyDeleteসুন্দর পোষ্টটির জন্য অশেষ ধন্যবাদ।